অনুবাদ : আমীর হামযাহ
মানব জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হচ্ছে পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। এটি শুধু ধর্মীয় দিক থেকে নয়, বরং সামাজিক, পারিবারিক এবং মানসিক দিক দিয়েও অমূল্য। ইসলামে পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাদের কৃতজ্ঞতায় থাকার গুরুত্ব বারবার বলা হয়েছে। কুরআন এবং হাদিসে বহুবার বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি তার পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা রাখে, তার জীবন সুন্দর হয় এবং আল্লাহ তাকে তাঁর আশীর্বাদে ভূষিত করেন। তবে, বাস্তব জীবনেও এই শিক্ষা কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে আমাদের মাঝে মাঝে সন্দেহ থাকে। তবে আজকের এই গল্পটি আমাদের দেখায়, যে পিতার প্রতি সঠিক শ্রদ্ধা রাখলে জীবন এমন এক নতুন পথে চলে যায়, যা কখনো কল্পনাও করা যায় না।
এই গল্পের নায়ক হলেন এক সৌদি যুবক, যিনি নিজেকে একটি ভালো জীবনের জন্য প্রস্তুত করতে থাকেন, কিন্তু একদিন এমন এক ঘটনা ঘটে, যা তার জীবনকে চিরকাল বদলে দেয়। যুবকটি সদ্য স্নাতক হয়ে জীবনের প্রথম দিকে দাঁড়িয়ে ছিল। তাঁর জীবনে সবচেয়ে বড় চিন্তা ছিল বিয়ে করা এবং সে তার সঞ্চিত অর্থ দিয়ে বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তবে, একদিন তার বাড়িতে এক ব্যক্তি এসে উপস্থিত হয়। সেই ব্যক্তি যুবকের পিতার কাছে ঋণের ৯০ হাজার সৌদি রিয়াল দাবি করেন। যুবকের পিতা বৃদ্ধ এবং অসুস্থ ছিলেন, তিনি কোনো কাজ করতে পারেন না। যুবকটি হতাশ হয়ে পড়ে, কারণ সে নিজের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিল এবং ঋণ পরিশোধের জন্য তার কাছে খুব কম অর্থ ছিল।
তবে, তার হৃদয়ে পিতার প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা ছিল। সে সিদ্ধান্ত নেয়, নিজের সমস্ত সঞ্চিত সাতাশ হাজার রিয়াল ওই ব্যক্তিকে দিয়ে ঋণ শোধ করবে, এবং প্রতিজ্ঞা করে, বাকি অর্থ শীঘ্রই পরিশোধ করবে। যুবকের পিতা যখন জানতে পারেন যে তার ছেলে নিজের সঞ্চিত টাকা দিয়ে ঋণ শোধ করেছে, তখন তিনি অশ্রুসজল হয়ে পড়েন। তিনি চাইছিলেন, তাঁর ছেলে যেন তার সঞ্চিত অর্থ ফেরত নেয়, কিন্তু যুবকটি বুঝতে পারে, তার পিতা কেবল তাকে ভালোবাসাই প্রকাশ করেছেন, আর তার জন্য এই ত্যাগ করা তার জন্য এক গৌরবের বিষয়।
যুবকটি তার পিতার ঋণ শোধের প্রক্রিয়া চালিয়ে যায়, তবে মনে মনে সে দুশ্চিন্তায় ছিল—কীভাবে বাকী অর্থ পরিশোধ করবে? তেমন সময়েই, তার এক বন্ধু তাকে একটি নতুন চাকরির প্রস্তাব দেয়, যা তার জীবন পুরোপুরি বদলে দেয়। ব্যবসায়ী একজন ব্যক্তির সাথে সাক্ষাতের পর, সে জানায় যে, যুবকটি তার সব কাজের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত এবং তাকে মাসিক বিশ হাজার রিয়াল বেতনসহ, বার্ষিক লাভের ২৫% দেওয়া হবে। যুবকটি অবাক হয়ে যায় এবং সে পুরো গল্পটি ব্যবসায়ীকে শোনায়। ব্যবসায়ী যুবকের পিতার প্রতি শ্রদ্ধা দেখে গভীরভাবে প্রভাবিত হন এবং ঠিক করেন যে, যুবকের ঋণ শোধের জন্য তিনি তাকে কিছু সহায়তা করবেন।
কিছু দিনের মধ্যে, যুবকটি তার জীবনে এক নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে যায়। তার পিতার প্রতি শ্রদ্ধার ফলস্বরূপ তার জীবনে এমন এক সুযোগ আসে, যা সে কখনো কল্পনাও করেনি।
এটি শুধুমাত্র একটি সৌদি যুবকের গল্প নয়, বরং একটি মহান শিক্ষা—পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা কখনো বৃথা যায় না। আল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, পিতামাতার প্রতি সদয় হতে, তাদের কখনো অপমান না করতে, বরং তাদের প্রতি কোমল আচরণ করতে। কুরআনে বলা হয়েছে:
“তোমার পালনকর্তা আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদত করবে এবং পিতা-মাতার প্রতি সদয় আচরণ করবে। যদি তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই তোমার কাছে বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে অশোভন কথা বলো না এবং তাদেরকে তিরস্কার কোরো না। বরং তাদের প্রতি সদয় কথাবার্তা বলো। তাদের জন্য বিনয়ের সঙ্গে কোমল পাখির মতো আচরণ করো এবং বলো, ‘হে আমার প্রতিপালক, তাদের প্রতি করুণা করো, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালীন সময় সুশ্রদ্ধভাবে লালনপালন করেছে।’” (সূরা ইসরা, আয়াত ২৩)
এই গল্প আমাদের শেখায়, যে পিতামাতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা দুনিয়া ও আখিরাতে সুখের পথ খোলে। আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী, পিতার প্রতি শ্রদ্ধা এমন এক শক্তি, যা আমাদের জীবন পরিবর্তন করে দেয়।