মাওলানা ইমদাদুল্লাহ বিন আশরাফ আলী।।
অনেক দম্পতি বিয়ের পর বাচ্চা নিতে দেরি করে থাকেন। বয়সের স্বল্পতা ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছাড়াও অনেকে একবছর, দুইবছর এমনকি তিন-চার বছরও বাচ্চা নেন না। নিজেদের ক্যারিয়ার, পড়াশোনা, দাম্পত্য জীবন গুছিয়ে নেওয়া ইত্যাদি হিসাব-নিকাশ করে তারা সন্তান নিতে চান। এক্ষেত্রে অনেকের জিজ্ঞাসা হলো, ওজর ছাড়া এভাবে বাচ্চা নিতে দেরি করা কি বৈধ?
সন্তান জন্মদান মূলত একটি বড় গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বপূর্ণ কাজ। বিশেষত নারীদের ক্ষেত্রে তা রীতিমত একটি চ্যালেঞ্জ। বিয়ের মাধ্যমে একজন নারী সম্পূর্ণ ভিন্ন এক জগতে প্রবেশ করে। নতুন এই পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়াতে একটু সময় লাগে। তার আগেই যদি তাকে নতুন আরেক পরিবেশে প্রবেশের আমন্ত্রণ জানানো হয় তাহলে তার জন্য বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রে জটিল হয়ে যায়।
প্রতিটি নারীর জীবনে বিয়ের চেয়েও সন্তান জন্মদানের মধ্যদিয়ে এক বড় জটিল অধ্যায়ের সূচনা হয়। তাই সন্তান নেওয়ার আগে প্রত্যেক নারীর শারীরিক ও মানসিক পূর্ণ বিকাশ ও প্রস্তুতির প্রয়োজন। শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্তি ও সামর্থ্যবান হওয়ার আগে বাচ্চা জন্ম দিতে গেলে বাচ্চা ও মায়ের অনেক সমস্যা হওয়ার আশংকা থাকে। এ ছাড়া সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক বন্ধন দৃঢ় হওয়াও দরকার। পরস্পরকে ভালোভাবে বোঝা দরকার। এর জন্যও কিছু সময়ের প্রয়োজন হয়।
এসব দিক বিবেচনায় বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী নিজেদের পারস্পরিক পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত মোতাবেক সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সময় বিলম্ব করলে শরীয়তের দৃষ্টিতে তা নাজায়েয হবে বলে মনে হয় না। উক্ত বিলম্ব স্ত্রীকে সন্তান জন্মদানের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে সাহায্য করবে। এ দৃষ্টিকোণ থেকে স্বামী-স্ত্রীর প্রথম সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সময় বিরতি দেওয়া উচিতও বটে। এতে সন্তানের প্রতিপালন সহজ ও সুন্দর হবে।
তবে কোনোভাবেই যেন এই বিলম্বের কারণ কোনো গলদ বিশ্বাস বা চিন্তাধারা না হয়। অনাগত সন্তানের রিযিকের ভয়ে যেন উক্ত বিলম্ব করা না হয়। নতুবা তা নাজায়েয হয়ে যাবে।
[ফাতাওয়া দারুল উলূম যাকারিয়া ৩/৬৬১]