#এক. বিজয় দিবস।জুলুম নির্যাতন ও অধিকার বঞ্চিত করণ থেকে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণ ১৯৭১ সালে আজকের মত একটি তারিখে মুক্তি পেয়েছিল। তাই শুকরিয়া আদায় করা উচিৎ। যেকোন জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই এ শুকরিয়া আদায় করতে হয়। আমরা শুকরিয়া আদায় করছি। পাশাপাশি আল্লাহর কাছে এ আবেদনও করছি যে, তিনি যেন পুরাতন জালেমদের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে নতুন কোন জালেমের খপ্পরে ঠেলে না দেন।
#দুই. অতি আবেগ।আমরা জাতি হিসেবে বাঙ্গালী। আমাদের ‘হুজুগ’ যেমন বেশি আবেগটাও একটু বেশি। দেশের সব প্রাণী সব শ্রেণীর মাঝেই কথাটি সমানভাবে কার্যকর।এরই ধারাবাহিকতায় অনেক দ্বীনদার বাঙ্গালীর মাঝে বিজয় দিবস ধর্মীয় ধাঁচে পালন করার ‘প্রবণতা’ দেখা যায়। তাই কুরআন-সুন্নাহ থেকে বিজয় দিবসের আমল ‘আবিষ্কার’ করা শুরু করে দেন।সূরা বাকারায় বনী ইসরাঈলকে ফেরাউনের কুফুরী শাসন ও নির্যাতন থেকে মুক্তি এবং পরবর্তিতে ইসলামী রাষ্ট গড়ে তোলা তাওফীক দান-বিষয়ক আয়াত এসেছে। সেখানে তাদেরকে শুকরিয়া আদায় ও আরো কিছু আমলের আদেশ আল্লাহ করেছেন। এমনিভাবে সুরা নাসার এ মক্কা বিজয়ের সময় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কিছু আমলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তো অতি আবেগী এই দ্বীনদ্বারগণ সেখান থেকে বিজয় দিবসের ‘আমল ’ আবিষ্কার করে ফেলেন। সুবহানাল্লাহ পড়া। আলহামদুলিল্লাহ পড়া। ইস্তিগফার করা। শুকরিয়া আদায় করা। আরো আরো।এ সকল আমল এমনিতেই করলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যখনই এগুলো বিশেষ কোন অনুষ্ঠানের সাথে দ্বীনের নামে জুড়ে দেওয়া হয় তখন তাতে কয়েকটি বিষয় সামনে চলে আসে।
(১) নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মূসা আলাইহিস সালামের বিজয় ছিল কুফুরের উপর ইসলামের বিজয়। কিন্তু আমাদের বিজয় কি এ ধরনের?(!)
(২) নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মূসা আলাইহিস সালামের বিজয় ছিল কুফুর রাষ্ট্রের বিলুপ্তি ও ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন। যেখানে আল্লাহর দ্বীন ও তাঁর বিধান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আর আমাদের? (!)
(৩) কোন বিষয় ইবাদত হওয়ার জন্য ‘তাওক্বীফ’ (শরীয়তের প্রমাণ) শর্ত। বিজয় দিবসের ইবাদতের ক্ষেত্রে কোন তাওক্বীফ আছে কী? (!)
(৪) মাক্কা বিজয়ের পর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধিক বছর পৃথিবীতে ছিলন। বিজয় দিবস পালন করার কোন প্রমাণ নেই। পরবর্তী খলীফাদের থেকেও এর কোন প্রমাণ নেই। মূলত ইসলামে “দিবস-পালনে”র কোন প্রথা নেই। যে কোন ব্যক্তি বা বিজয়ের কোন দিবস ইসলাম কখনো পালন করেনি এবং সমর্থনও করে না। তাই- ধীরে চলো বন্ধু! আবেগ সামলাও। এই ইবাদত শরীয়ত বিকৃতির অন্তর্ভুক্ত নয় তো?
#তিন. দেশপ্রেম।আমাদের দেশ, দেশপ্রেমের উর্বর ভূমি। বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে চলে নানা ধরনের দেশপ্রেমের প্রদর্শনী ও চেতনার জয়-গান। এতে অত আপত্তি নেই। কিন্তু সমস্যা বাঁধে তখন যখন দেখা যায়, যারা দেশ প্রেমের শ্লোগানে মুখে ফেনা তুলেন তারাই দেশের নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা করেন না! দূর্ণীতিতে জড়ান। আরো দেখা যায়, নানা দেশবিরোধী কর্মে তাদের সরব উপস্থিতি! তখন এই দেশপ্রেমের জন্য হয় আফসুস আর প্রেমিকদের জন্য হয় করুণা!
#চার. একটু ভিন্ন।অনেকে আছেন যারা একটু ভিন্ন। একটু অন্য। তারা নেই দেশপ্রেমের র্যালিতে। তাদের মুখে শুনা যায় না দেশেপ্রেমের গান। ‘চেতনার’ এই জমজমাট ব্যবসায় তারা একেবারেই রিক্তহস্ত। তাদেরকে একটু ভিন্নই বলতে হয়। নেই রাষ্ট্র-বিরোধী কোন কাজে। ঋণখেলাপী, দূর্ণীতি, হামলা-মামলা কিছুতেই তারা নেই। অনেকে চোখে তারা প্রকৃত দেশপ্রেমী নয়। (!)