নকীব বিন মুজীব
২৩ ৷ ০২ ৷ ২০১৯ রাত: ১: ৪০ মি.
একটি ছোট পরিবার৷ তিন ভাই দুই বোন৷ সবাই বিবাহিত৷ ভাইবোনদের সম্পর্ক খুবই আন্তরিক ও সৌহাদ্যপূর্ণ৷ বিয়ের আগে যেমন ছিল, বিয়ের পরেও তেমন৷ ছোঠ বোনটি এখন মায়ের বাড়িতে৷ এদিকে তার ভাবীরাও আছে এখানে৷ আনন্দ বিনোদনের মধ্য দিয়ে সব৷ কিন্তু ঘটল ঘটনাটি। ছোট বোনের স্বামী মাহমুদ৷ ছোট হলেও খুব বিচক্ষণ ও ইনসাফদার মানুষ৷ মাহমুদ দেখল, তার ওয়াইফ এখানে এমন কিছু আচরণ করছে, যা সে শ্বশুর বাড়িতে অপছন্দ করতো৷ একই বিষয়ে কতদিন কেঁদে কেঁদে তার কাছেই না সে কত কথা বলছে৷ অথচ এ সেই মানুষটি কিনা…….
প্রাণপ্রিয় জীবনসঙ্গিনী কোন অনুচিত কাজে জড়িয়ে যাবে, আর সে তাকে ফিরাবে না, বোঝাবে না, এ হতে পারে না। তাই মাহমুদ মনে মনে ঠিক করল, আজ ঘুমের সময় এ বিষয়ে আফীফার সাথে আলোচনা করবে৷ বিষয়টা ওকে বুঝিয়ে বলবে৷ এতে আফীফারও লাভ হবে, তার ভাবীরও উপকার হবে৷ আর মাহমুদ; সে তে উভয়ের খুশির মাধ্যমরূপে আল্লাহর কাছে মহাপ্রতিদান পাবে ইনশাআল্লাহ!
শোন আফীফা! তোমাকে একটা কথা বলি। আফীফা বলল : অবশ্যই বলুন! আপনার বাস্তবমুখী উপকারী কথা শোনার জন্য আমি সবসময় অপেক্ষায় নয় প্রতীক্ষায় থাকি!! মাহমুদ বলল: আমি জানি, আমি তোমাকে যতটুকু ভালবাসি, এরচে অনেক বেশী তুমি আমাকে ভালবাস! তাইতো কোন বিষয়ে মাথায় কোন চিন্তা আসলে আমি তোমার সাথে শেয়ার করি৷ এবং আমরা উভয়ই উপকৃত হই!— আফীফা বালিশ থেকে মাথাটা হাতের উপর সামান্য উচু করে মাহমুদের কথাগুলো শুনছে— আফীফা চোখের ইশারায় বলতে বলল মাহমুদকে৷
দেখ আফীফা! তুমি যখন তোমার বিভিন্ন ব্যথার কথা, কষ্টের কথা আমাকে বল, তখন তোমার জন্য আমার খুব খারাপ লাগে৷ অস্থির অবস্থায় আমি ভাবতে থাকি তোমার কষ্টগুলো কীভাবে লাঘব করা যায়। কীভাবে, কত দ্রুত তোমাকে পেরেশানিমুক্ত করা যায়। তুমিও কি আমার এ অবস্থাটা বুঝতে পার প্রিয়? ‘পারি বলেই তো যে কোন বিষয়ে আল্লাহর পর আপনার কাছেই সান্ত্বনা খুঁজি৷ বিভিন্ন বিষয় কেবল আপনার কাছেই শেয়ার করি‘ খুব আস্থার সাথে জবাব দিল আফীফা৷
মাহমুদ বলল: আজ দেখলাম নাফীসা ভাবী মন খারাপ করে কী জানি বলাবলি করছে। রুমে শুয়ে শুয়ে চোখের পানিও নাকি ফেলেছে। মাহমুদের কথা শেষ না হতেই আফীফা বলে উঠল : আর বলবেন না, এই সামান্য কাজ করতে সারাদিন লাগিয়ে দেয়৷ এ দিকে যায় তো ঐ দিকের খবর থাকে না৷ হাত থেকে ফেলে আজ আরেকটা প্লেট ভেঙ্গে ফেলেছে, একটা জ্বালা! আফীফার কথা শেষ হল৷
মাহমুদ নড়েচড়ে বসল! আফীফার পিঠে হাত রেখে বলল: শোন! ভাবী যে সারাদিন কাজগুলো করেছে, তুমি তাকে কতটুকু সহযোগিতা করেছ? তরকারী কাটার সময় তুমি কি কিছু তাকে কেটে দিয়েছ? ভাবী যখন রান্নাবান্নায় ব্যস্ত, এ দিকে যাকওয়ান পেশাব-পায়খানা করে কাপড়-চোপড় নষ্ট করেছিল, তুমি কি তোমার পিচ্চি ভাতীজার জামাকাপড়গুলো পরিবর্তন করে দিয়েছ? কাঁথাগুলো একটু সরিয়ে তাকে শুকনো স্থানে রেখেছ!!? তুমি কি পারতে না দুপুরের খাবারের পর প্লেটবাটিগুলো পরিস্কার করে দিতে? বিকালে বাড়ির উঠোনটা তো ভাবীই ঝাড়ু দিয়েছে!
আফীফা! আমার কথাগুলো শুনছো!!? জড়তার স্বরে ক্ষীণভাবে নিয়ে আফীফা উত্তর দিল “জ্বী”। আচ্ছা মনে পড়ে তোমার? তুমিই না আমাকে বলতে: দেখুন! আপনার ছোট বোনটা কোন কাজে আমাকে একটুও সহযোগিতা করে না৷ সে যদি টুকিটাকি সামান্য কাজও আমাকে এগিয়ে দিত, তাহলে তা আমার জন্য বিরাট সহযোগিতা হতো! মনটা একটু ভাল লাগত! কিছুটা হলেও সান্ত্বনা পেতাম৷ কয়েকদিন আগেই না বললে: মেজ আপু তো সহযোগিতা করেই না, বরং কখনো কখনো গোসল করে তার জামাটাও আমার জন্য রেখে যায়! আবার উনিশ-বিশ হলে কত কটুবাক্য যে ব্যবহার করে; তার হিসাব নেই!
দেখ প্রিয়া! তুমি যখন এখানে তোমার ভাইয়ের বউয়ের সাথে, তোমার ভাবীদের সাথে এমন আচরণ করবে, হতে পারে তখন আল্লাহ তোমার শশুর বাড়ীতে এমন কিছু মানুষ তৈরী করে দেবেন, যারা তোমার সাথে ওরকম আচরণ করবে! তখন তোমার কাছে কেমন লাগবে! বল আফীফা!
আফীফা! মন খারাপ করো না! মাহমুদ আরো কিছু বলার আগেই আফীফা কেঁদে কেঁদে বলতে লাগল: কেন মন খারাপ করব! আমারও মনে পড়ছে; আসলে আমিই তো আপনাকে এ কথাগুলো কেঁদে কেঁদে বলতাম! কিন্তু, জানি না কেনইবা আমিই এর বিপরীত আচরণ করতাম! বিশ্বাস করুন! আমি আপনাকে অনেক মুহাব্বত করি। আপনার প্রতিটা কথা মেনে চলার চেষ্টা করি। আমি লক্ষ করেছি, বিয়ের পর থেকে আমি অনেক ভাল হয়েছি। আগে কত মানুষকে কত কষ্ট দিতাম! জ্বালাতন করতাম! আরো কত কী করতাম! কিন্তু আপনাকে পাওয়ার পর আলহামদুলিল্লাহ আমি অনেক কিছু শিখেছি। যে কোন বিষয়ে এখন ভাবি, চিন্তা করি। এটা কি আসলেই উচিত হয়েছে! কখনো কিছু ভুল হলে অনুতপ্ত হই! অনুশোচনাবোধ করি!
এই কথা দিলাম আপনাকে, আজ থেকে কখনো এমন করব না৷ আমি আমার সাধ্যানুযায়ী ভাবীকে সহযোগিতা করব ইনশাআল্লাহ৷ অলস শুয়ে-বসে থেকে কাজের আদেশ করব না৷ আর হ্যাঁ! আমি কাল সকালে ভাবীর কাছে আমার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইব৷ আর বলব: আজ থেকে তুমি আমার বোন! আমরা সবসময় মিলেমিশে চলব৷ আপনি আমাকে ক্ষমা করে….” আফীফা আর বলতে পারছে না!…..