আমীর হামযাহ
দাম্পত্য জীবন আল্লাহর একটি বিশেষ দান, যা স্বামী-স্ত্রীকে পরস্পরের জন্য সান্ত্বনা ও শান্তির উৎস করে তুলেছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দাম্পত্য জীবনে একঘেয়েমি প্রবেশ করতে পারে। দিনের পর দিন একই কাজের পুনরাবৃত্তি, পারিবারিক দায়িত্বের চাপ এবং কর্মব্যস্ত জীবনের কারণে সম্পর্কের গভীরতা ও আকর্ষণ হ্রাস পায়। ইসলামি নির্দেশনা অনুসরণ করে এই একঘেয়েমি দূর করা এবং সম্পর্ককে নতুন উদ্দীপনায় ভরিয়ে তোলা সম্ভব।
প্রতিদিনের জীবনে নতুনত্ব আনুন
দৈনন্দিন জীবনে একঘেয়েমি দূর করতে নতুন কিছু করুন। প্রাত্যহিক জীবনের চিরচেনা রুটিন ভেঙে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে কিছু আনন্দময় সময় কাটান। উদাহরণস্বরূপ, একসঙ্গে বাইরে ডিনারে যান, বা ছুটির দিনে ঘরে নতুন কিছু পরিকল্পনা করুন। একদিনের জন্য হলেও পরিবার থেকে আলাদা সময় কাটানো সম্পর্কের মধুরতা বাড়াতে সহায়ক। ইসলাম আমাদের ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনের শিক্ষা দেয়, যেখানে আনন্দ এবং দায়িত্বের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।
আবেগকে পুনর্জাগরিত করুন
ইসলামের দৃষ্টিতে পারস্পরিক ভালোবাসা প্রকাশের গুরুত্ব অপরিসীম। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর স্ত্রীদের প্রতি গভীর ভালোবাসা প্রকাশ করতেন এবং তাঁদের মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। তাই দাম্পত্য সম্পর্কের সৌন্দর্য বাড়াতে ভালোবাসা প্রকাশ করুন। ছোট ছোট উপহার দিন, প্রিয়জনের পছন্দের খাবার রান্না করুন, অথবা স্মৃতিময় কোনো জায়গায় ভ্রমণে যান। ভালোবাসা প্রকাশের এসব উপায় সম্পর্ককে আরও গভীর করে তোলে।
একসঙ্গে সৃজনশীল কার্যক্রমে অংশ নিন
স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে নতুন কিছু করার উদ্যোগ নিন। এটি হতে পারে বাগান করা, ঘরের সজ্জা পরিবর্তন, বা সৃজনশীল কোনো প্রজেক্টে অংশগ্রহণ। এছাড়াও একসঙ্গে কুরআন তিলাওয়াত করা বা ইসলামি বই পড়া একটি সুন্দর অভ্যাস হতে পারে। এই ধরনের অভ্যাস শুধু সম্পর্ককে নয়, আখিরাতের সম্পর্ককেও মজবুত করবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে তার পরিবারের জন্য উত্তম।” তাই পরিবারে সময় ব্যয় করাকে একটি ইবাদত হিসেবে বিবেচনা করুন।
আন্তরিক সংযোগ বৃদ্ধি করুন
দাম্পত্য জীবনে গভীর সংযোগ বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং মনোযোগী হন। মোবাইল ফোন বা টেলিভিশনের মতো মনোযোগ বিচ্ছিন্নকারী বস্তু থেকে দূরে থাকুন। পরিবারের বা কাজের চাপে চাপা পড়ে যাওয়া বিষয়গুলো বাদ দিয়ে পারস্পরিক আনন্দদায়ক এবং অর্থবহ আলাপ করুন। এভাবে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ ও আন্তরিক হয়ে উঠবে।
পরিকল্পনার সীমা ছাড়িয়ে চলুন
যখনই রুটিন ভাঙার প্রয়োজন অনুভব করবেন, তখন দীর্ঘ পরিকল্পনার পথে না গিয়ে তাৎক্ষণিক কিছু করুন। উদাহরণস্বরূপ, রাতে হঠাৎ হাঁটতে যাওয়া, বা একদিনের জন্য কাছাকাছি কোথাও সফরে যাওয়া। ইসলাম আমাদের প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ এবং আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার শিক্ষা দেয়। তাই জীবনে নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের চেষ্টা করুন।
রুটিনের ভারসাম্য রক্ষা করুন
রুটিন জীবনের স্থিতিশীলতা এনে দেয়। তবে একঘেয়েমি সম্পর্ককে নিস্তেজ করতে পারে। ইসলামি নির্দেশনা অনুযায়ী, দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসা ও দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে একঘেয়েমি দূর করা যায়। পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সৃজনশীল এবং অর্থবহ পরিবর্তন আনুন।
শেষ কথা
দাম্পত্য জীবন একে অপরের প্রতি দায়িত্বশীলতা এবং ভালোবাসার মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া উচিত। সম্পর্ককে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে চাই আন্তরিক প্রচেষ্টা, সৃজনশীল উদ্যোগ এবং ইসলামি শিক্ষার বাস্তবায়ন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুখী এবং বরকতময় দাম্পত্য জীবন দান করুন। আমিন।