আমীর হামযাহ
কর্মজীবন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ফুটিয়ে তুলতে হয় নিজেকে। নিজের ব্যক্তিত্ব। যোগ্যতা ও সফলতা। সক্ষমতা ও কর্মদক্ষতা। সবকিছু। সফল কর্মজীবনের মানে এটিই। তবে কর্মজীবনে সফল হওয়া অসম্ভব নয়। অতটা কঠিনও নয়। সম্ভব। সাধ্যাধীন। কিছু বিষয় লক্ষ রাখতে হবে। মেনে চলতে হবে। আশা করছি নিম্নোল্লিখিত বিষয়গুলো সহায়ক হবে। এর আলোকে গড়া যাবে একটি সফল কর্মজীবন।
এ বিষয়ে পূর্বের পর্ব পড়তে এখানে যান
নিজেকে বোঝা
মেধা ও বুদ্ধি আল্লাহর দান। তবে মানুষের পক্ষে এর বৃদ্ধি সম্ভব। নিজেকে যাচাই করা। নিজের দুর্বলতা ও সক্ষমতার দিকগুলো চিহ্ণিত করা। শক্তি ও সক্ষমতার দিকগুলো উন্নতির চর্চা করা। দুর্বলতার দিকগুলো কাটিয়ে উঠতে সচেষ্ট হওয়া। এসবই আত্মযোগ্যতা বৃদ্ধির উপায়। নিজেকে চিনতে হবে। কর্মজীবনের সমস্যা থেকে। সংকট থেকে। অন্যকে দায়ি না করে, নিজের মাঝেই খুঁজতে হবে– উৎস কোথায়? কারণ কী? আত্মসমালোচনা করবে। ভবিষ্যতের জন্য সচেতন হবে।
নিজেকে বুঝবে। নিজ যোগ্যতা-প্রতিভার বাস্তব অবস্থা বুঝবে। সাধ্যাতীত কোন দায়িত্ব গ্রহণ হতে বিরত থাকবে। সামনে থাকবে লক্ষ্য। যা বাস্তব ও সম্ভব। এরপর এগুবে লক্ষ্যপানে। পরিকল্পনামতো। তাহলেই তা বাস্তবায়ন সহজ হবে। সম্ভব হবে।
সুবিন্যস্ত চিন্তার অভ্যাস
মানুষের জীবন বৈচিত্রময়। আছে বিভিন্ন পরিস্থিতি। বাঁক। সমস্যা। ভুল। নানান আকারের। নানান প্রকারের। এসবের নিয়ন্ত্রণ, এসব থেকে উত্তরণ সম্ভব। একটি পথে। একটি উপায়ে। অভ্যাস করা সুচিন্তার। সুবিন্যস্ত ভাবনা আর গোছালো পরিকল্পনার। কেউ হাজারো বই-পুস্তক পড়ল। অনেক তথ্য-উপাত্ত জেনে ফেলল। এসব তার অতটা কাজে বা উপকারে আসবে না, যতটা তাকে উপকার দেবে গোছালো চিন্তায় অভ্যস্ত হওয়া। নিয়মিত সুবিন্যস্ত ভাবনার অভ্যাস গড়ে তোলা। এতে সে জীবনসমস্যার কারণ খুঁজে পাবে। পারবে সমাধান ও উত্তরণের মহাসড়ক আবিষ্কার করতে।
অধীনস্থদের সাথে থাকা
আবেগ-অনুভূতি। মানবজীবনের অত্যন্ত সংবেদনশীল দিক। তাই সহকর্মী ও অধীনস্থদের সঙ্গে বুঝে চলা। যথাস্থানে উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা। তাদের আনন্দে আনন্দিত হওয়া। চিন্তায় চিন্তিত হওয়া। সুখ-দুখ ভাগাভাগি করা। কাছে টেনে নেয়া। বিভিন্ন সময়ে। বিভিন্ন উপলক্ষে। অভিযোগ শোনা। সমাধানের চেষ্টা করা। শখ ও আবদারগুলো বিবেচনা করা। যৌক্তিক ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া। এসব পদস্থের দায়িত্ব। শাসনে আদর থাকবে। আদরেও থাকবে শাসন। এতে আপন আরো আপন হবে। পরও হবে আপন। অধীনস্থদের প্রীতি-ভালবাসায় স্নাত হবে জীবন। তারা অভিযোগ করবে না। অমান্য করবে না। সম্পর্ক হবে মধুর। রোদমাখা উজ্জ্বল।
আত্মতৃপ্তি ও আত্মপ্রতারণা থেকে বাঁচা
কর্মজীবনের সবেমাত্র হাতেখড়ি। তারুণ্য ও যৌবনের ছাপ–কাজেকর্মে, আচরণে-উচ্চারণে। অনেকের ভাবনা– অর্জন অনেক আছে। আছে জ্ঞান। বুদ্ধি। মোধা। তাই পরামর্শ শোনার প্রয়োজন নেই। দিকনির্দেশ মানার দরকার নেই। নিজেকে ভাবে, উপদেশ ও সমালোচনার বহু ঊর্ধ্বে। এসবই অবিনয় । দাম্ভিকতা। আত্মতৃপ্তি ও আত্মপ্রতারণা। মানুষ এ শ্রেণীর লোকেদের খুব একটা ভালোবাসে না। এদের বন্ধু-বান্ধব থাকে না। এরা সমাজে-কর্মস্থলে সর্বত্রই নিন্দিত হয়। পক্ষান্তরে যারা ভদ্র। বিনয়ী। অহংকারমুক্ত। তারা সকলের আস্থাভাজন। সহকর্মীদের প্রিয়প্রাত্র। সকলেই তাদের ভালোবাসে। তাই হতে হবে বিনয়ী ও বাস্তবসচেতন। বাঁচতে হবে আত্মতৃপ্তি ও আত্মপ্রতারণা থেকে।
নম্র ও স্বল্পভাষী হওয়া
উত্তম কথা সদকা। এতে যাদুর প্রভাব। মানুষ সহজেই প্রভাবিত হয়। দয়া করে….। অনুগ্রহপূর্বক….. এধরনের শিষ্ট সূচনার বেশ প্রভাব। এভাবে নির্দিষ্ট আবেদন তুলে ধরা হলে সহজেই সাড়া মিলে। অনেক সময় শোনার প্রয়োজন হয়। কারো কথা। সমস্যা। অভিযোগ। সেসব শুনতে হবে। নিঃশব্দে। উত্তমভাবে। তবেই সে খুশী হবে। উভয়ে হবে উপকৃত।
মানুষ। প্রত্যেকের রুচি আলাদা। আগ্রহ ভিন্ন। যত জন তত মন। স্বাতন্ত্র্য রয়েছে সবার। ব্যক্তিত্বে। সত্তায়। আকারে। আকৃতিতে। লেনদেন ও আচার-ব্যবহারে। সব মানুষের কাছে একধরনের ব্যবহার কামনা করাও উচিৎ নয়। এই ভিন্নতা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। অনুধাবন করতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে। এতে মানুষের সাথে উপযুক্ত আচরণ করা সহজ হবে। স্মরণ রাখা উচিৎ- মানুষের সাথে যেমন আচরণ করা হবে, তেমনই পাওয়া যাবে।
উপর্যুক্ত বিষয়গুলোর সাথে চাই দায়িত্ব সচেতনতা। আমানতদারি। সততা। চরিত্রে উৎকর্ষতা। বিনিময় বা কৃতজ্ঞতাপ্রাপ্তিতে নিস্পৃহা। নিঃস্বার্থতা। জীবনে। কর্মে। জীবনকর্মে। তবেই ইনশাআল্লাহ! জীবন হবে সুন্দর। উপভোগ্য। কর্মজীবন হবে উজ্জ্বল। সাফল্যমণ্ডিত। নেমে আসবে সৌভাগ্যের ধারা। তুলে দিবে ব্যক্তিকে। ব্যক্তিত্বকে। উপরে। অনেক উপরে। মর্যাদার ঈর্ষণীয় শিখরে। জাতি হবে ধন্য। জীবন হবে অনন্য! অনুসরণীয়! আলোকিত চাঁদের মতো!
(عشر وصايا للنجاح في الحياة العملية للدكتور علي أحمد এর ছায়া অবলম্বনে।)