মাওলানা খলীলুর রহমান সাজ্জাদ নোমানী ।।
গতকাল একটি চিঠি পেয়েছি, যা আমার রাতের ঘুম ছিনিয়ে নিয়েছে। সত্যি বলছি, চিঠিটি পড়ে কয়েক ঘন্টা আমি নির্বাক হয়ে পড়ে ছিলাম। চিঠিটি এক নারীর পক্ষ থেকে এসেছিল। আমি সেই চিঠির কিছু অংশ আপনাদেরকে পড়ে শোনাচ্ছি। এটাই আমার আজকের আলোচ্য বিষয়।
মেয়েটি লিখেছে, “ আমি এবং আমার স্বামী দুজনেই আপনার হাতে বাইআত হয়েছি। আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমার সাথে অন্যায় আচরণ করে, আমার উপর অত্যাচার করে। আমার স্বামী অনেক ভালো। আমি আল্লাহ তাআলার লাখো শোকর আদায় করি। কিন্তু আমি এটা জানতে চাই, যদি স্ত্রীর উপর শ্বশুরবাড়ির লোকজন জুলুম করে, অন্যায় আচরণ করে তাহলে কি স্বামীর জন্য এ কথা বলা উচিত হবে যে, আমার ভালোবাসার খাতিরে তুমি তাদের এই অত্যাচারগুলো সহ্য করো।
“ আমি এটা চাই না যে আমার স্বামী এবং আমার শাশুড়ি ঝগড়া করুক। তাদের মধ্যে কোনো মনোমালিন্য সৃষ্টি হোক। কিন্তু এটাতো চাই যে আমার স্বামী কৌশলে তার মাকে বোঝাক- অন্যায় আচরণ করা ঠিক নয়।
“ আমার শাশুড়ি আমাকে অসহায় মনে করেন, আমার দেখার কেউ নেই। আমার বাবা মারা গিয়েছেন। আমার কোন ভাই নেই। তিন বোন। বড় বোন কিছুদিন আগে ইন্তেকাল করেছেন। আমার মাও চার বছর আগে ইন্তেকাল করেছেন। যেহেতু আমার বাবার বাড়ি থেকে কেউ দেখার জন্য আসে না, তাই আমার শাশুড়ি মনে করেন, আমি অসহায়।
“ এমনকি আমার শাশুড়ি আমার স্বামী আমার সাথে হাসিমুখে কথা বলুক এটাও পছন্দ করেন না। যদি কখনো আমার সাথে আমার স্বামীকে হাসিমুখে কথা বলতে দেখেন তাহলে তাকে ধমক দেন। তার সাথে খারাপ আচরণ করেন।
“আমি খুব অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই কথাগুলো বলছি যে, ঘরের ভিতরে আমরা কী করি আমার শাশুড়ি সে বিষয়েও হস্তক্ষেপ করেন।…”
চিঠিতে আরও কথা আছে। কিন্তু যেটুকু পড়েছি, এটুকুর উপরই ভিত্তি করে আমি আজ ঠিক করেছি, যারা এ চিঠি শুনেছেন তাদের নিকট আমি আবেদন করব, আপনারা আপনাদের ঘরের খবর নিন।
আমাদের মুসলিম সমাজের ঘরে আজ এ গুলো কী হচ্ছে? এটা কি কোন মুসলিম শাশুড়ির আচরণ হতে পারে? শাশুড়ি হবার পর মা নিজের পুত্রবধুর সাথে কেমন যেন অন্য জগতের মানুষ হয়ে যান।
ছেলে স্ত্রীর সাথে আনন্দ করবে, একসাথে খাওয়া দাওয়া করবে-এটা তার খারাপ লাগে। বড় দু:খের বিষয়- আল্লাহর রাসূল বলেছেন, যখন কোন স্বামী তার স্ত্রীকে দেখে হাসি দেয় তখন সেখানে তৃতীয় আরেকজন হাসি দেন্। তৃতীয় আরেকজন হলেন, আল্লাহ।
মেয়েটি আরো লিখেছে, “আমার পাইলসের রোগ আছে। মাঝেমধ্যে আমার কাজ করতে অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু কেউ আমার কাজে কোন কাজে সহযোগিতা করে না। উল্টো আমাকে বলে- এই অল্প বয়সেই তুমি বুড়ো হয়ে গেছো। আমার শাশুড়ি, আমার ননদ- তারা কোন কাজ করে না। তারা মেহমানের মত থাকেন। তারা খাওয়ার পর নিজেদের প্লেটটাও ধোন না। সকালে ঘুম থেকে উঠতে উঠতে তাদের এগারোটা বারোটা বেজে যায়।”
আপনাদেরকে এই কথাটা বলতে চাই যে, আপনারা নিজেদের ঘরের খবর নেন। এ বিষয়ে সচেতন হোন। এটাকে হালকা কোনো বিষয় মনে করবেন না।
এসব অবস্থায় আমাদেরকে আইন-কানুনের ভাষায় কথা বলতে হয়। মাসআলা বলতে হয়। ইসলামী আইন হলো, ঘরের কোন কাজের দায়িত্ব স্ত্রীর নয়। ঘরের কাজের দায়িত্ব হলো স্বামীর। যদি স্ত্রী ঘরের কাজ করতে অস্বীকার করে তাহলে স্বামীর কোন অধিকার নেই স্ত্রীকে ঘরের কাজে বাধ্য করার।
কিন্তু আমাদের আলিমগণ একথা ভালোভাবে বুঝেন, ঘরোয়া জীবন শুধু আইন-কানুন দিয়ে চলে না। ঘরের জীবন বোঝাপড়ার মাধ্যমে চলে। মুহাব্বত-ভালোবাসার মাধ্যমে চলে। ইসলামী শরীয়ত বলে, যদি মা সন্তানকে দুধ পান করাতে অস্বীকার করে তাহলে স্বামীর কোন অধিকার নেই স্ত্রীকে দুধ পান করাতে বাধ্য করবে। আপনারা আশ্চর্য হবেন কিন্তু এটা ইসলামের আইন।
তাই যাদের কানে আমার এ আওয়াজ পৌঁছে, আমি আপনাদের সবাইকে আবেদন করব, আপনারা আপনাদের ঘরের ভেতরের খবর নেন। একদিন ছুটি নিয়ে ঘরে যান এবং সবাইকে সাথে নিয়ে বসুন। আলোচনা করুন। সবাইকে বলুন, চলো, আমরা অন্যের হক আদায়ের বিষয়ে সচেতন হই, এবং আমাদের ঘরোয়া জীবনকে আনন্দময় করে তুলি।
স্ত্রীকে বলব, মা, তুমি সবর কর। সবরের বিনিময় জান্নাত। তুমি মনে করো যে, আল্লাহ তাআলা তো এই কষ্টের বিনিময়ে তোমাকে জান্নাত দিবেন।
সেই সাথে শাশুড়িকে বলবো, আপনি কি ভুলে গেছেন, আখেরাত সামনে রয়েছে। কবর সামনে রয়েছে। আল্লাহর সামনে একদিন দাঁড়াতে হবে। এবং সবকিছুর জবাব দিতে হবে। আল্লাহ বড় থেকে বড় গুনাহ মাফ করেন। কিন্তু অন্যের হক নষ্ট করাকে আল্লাহ কখনো ক্ষমা করেন না। যদি কোন শিং বিহীন পশুকে কোন শিং বিশিষ্ট পশু কষ্ট দেয় তাহলে কেয়ামতের দিন সেটারও বদলা নেওয়া হবে। যে আল্লাহ চতুস্পদ জন্তুর মধ্যে এমন ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবেন সেই আল্লাহ কি মানুষের মধ্যে অত্যাচারের কোন বিচার করবেন না?
অনুলিখন: এনাম হাসান জুনাইদ
সৌজন্যে : ইসলাম টাইমস