ছাকিবুল ইসলাম কাসেমী
রিবঈ ইবনে হিরাশ ৷ হযরত আলী র. এর বিশিষ্ট ছাত্র ৷ ইলমের রাজদ্বারের সাথে যার হৃদয়ের সম্পর্ক, তার ইলমের ঝলকতো কমবেশী থাকবেই ৷ দ্বিতীয় স্বর্ণযুগের সৌভাগ্যবান তাবেয়ী ৷ ১২৪ হিজরীতে ইন্তেকাল করেছেন ৷ বিশেষ কিছু গুণে আচ্ছাদিত ছিলেন ৷কখনও মিথ্যা বলতেন না! মানুষের মুখে মুখে এসবের খুব চর্চা হত ৷ শুধু লৌকিকতা নয় ৷ বাস্তবতার বিস্ময়কর চিত্র উঠে এসেছে তার আলোকিত এই গুণের পথ ধরে ৷
তখন জালিম শাসক হাজ্জাজ বিন ইউসুফের সময় চলছিল ৷ যে কোনো কারণে তার দুই ছেলে হাজ্জাজের বিরাগভাজন হয়েছে ৷ তাদেরকে বেশ কদিন ধরে খুঁজছে পুলিশ শাস্তি দেয়ার জন্য ৷ কিন্তু কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না ৷ হাজ্জাজ রাগে ফুঁসে উঠছে ৷ হঠাৎ তার এক কর্মকর্তা বলে উঠল, জনাব ! রিবঈ ৷ তাদের পিতা ৷ সে কখনো মিথ্যা বলে না ৷ তাকে জিজ্ঞেস করলে সঠিক তথ্য জানা যাবে ৷ হাজ্জাজ বলল,তাহলে তাই কর ৷ ডেকে আনা হলো তাকে ৷ প্রথমেই প্রশ্ন করল হাজ্জাজ, কোথায় তোমার দুই ছেলে ? স্বাভাবিকভাবে রিবঈ উত্তর দিলেন, তারাতো বাসায়ই আছে! হতবাক পুরো মজলিস! আপন পুত্রের ব্যাপারেও সত্য কথা! যেখানে তার জীবন সঙ্কটাপন্য , সেখানেও শান্তভাবে সত্যের উচ্চারণ!
হাজ্জাজ এগিয়ে এলো! বিনম্র কণ্ঠে বলল: তোমার সাহসী সত্যবাদীতার কারণে তোমার দুই সন্তানকে আমি ক্ষমা করে দিলাম ৷রিবঈ বাসায় এসে সন্তানদেরকে সুসংবাদ জানালেন ৷ পিতা পুত্র সকলেই সত্যের অমিয় ফল ভোগ করে ধন্য হলেন ৷ ভাবতেই বিস্ময় জাগে, কী পাষাণ হৃদয়কেও সত্য বিগলিত করে দিতে সক্ষম !
রিবঈ কখনও হাসতেন না ৷ তিনি বলতেন, আমার ঠিকানা জান্নাতে হয়েছে কিনা, একথা যতদিন জানতে পারবো না, ততদিন হাসবো না ৷ সত্যিই কেউ তাকে কখনও হাসতে দেখতো না ৷ জীবনভর এভাবেই চলেছেন ৷ গভীর ভাবনার রেখা ফুটে থাকত চেহারা জুড়ে ৷ কিন্তু, যেদিন তিনি মৃত্য বরণ করলেন; তার পরের মূহুর্ত থেকে যে তার চেহারায় হাসির ঝিলিক লেগেছে- গোসল, জানাযা, কাফন দাফন সর্বত্র সেই হাসি লেগেই ছিল মুখে ৷ সকলেই তার সেই জান্নাতী হাসি মন ভরে দেখেছিল ৷ হয়ত আল্লাহ প্রিয় এই বান্দাকে জানিয়ে দিয়েছিলেন তার কাঙ্ক্ষিত ঠিকানার কথা ৷ আর তিনি তার প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী তখনই হেসে উঠেছিলেন ৷ প্রেমময় সেই স্বাপ্নিক হাসি !