মূল: শায়েখ আলী তানতাবী
ভাষান্তর: ছাকিবুল ইসলাম কাসেমী
অনেক আগে এক কবি বলেছিলেনكل من تلقاه يشكو داره যে কিছু পায়, সেই আরো অভিযোগের গল্প শোনায়! এই কবিতার এই অর্থ নয় যে, এই পৃথিবী কার? কে তাহলে পাবে এই পৃথিবীর রিযিকের সন্ধান? বরং বাস্তবতা হলো,যে যতো পরিমানই লাভ করুক, তবু তার অভাব অভিযোগ শেষ হয় না ৷ যেমন কেউ পনেরো হাজার রিয়াল বেতন পাচ্ছে, তবু সে দেখে কে ষোল হাজার সতেরো হাজার টাকা বেতন পাচ্ছে! তার কোন্ বন্ধু তার চেয়ে বেশী সুবিধা ভোগ করছে ৷ কে তার চেয়ে একটু বেশী লাভবান হয়ে যাচ্ছে ব্যবসায় !
অন্তহীন গল্প! অফুরান তৃষ্ণা!
রিযিক ও উপার্জনের বিষয়টা একটু বিস্তারীতভাবে বলতে চাচ্ছি ৷ অধিকাংশ মানুষই রিযিকের সমস্যার কথা বলেন ৷ উপার্জনের সঙ্কটের কথা বলেন ৷ তার রোজগার কম ৷ সংসার চলছে না ৷ সে আরও বেশী চাচ্ছে ৷ অনেক সময় এমন হচ্ছে, মানুষকে রিযিক দেয়া হচ্ছে, কিন্তু সে তৃপ্ত নয় ৷ সন্তুষ্ট নয় ৷ রাসূলে কারীম স.এরশাদ করেছেন: لو كان لابن آدم واديا من ذهب لابتغي له ثانيا ولو كان لابن آدم واديان من ذهب لابتغي له ثالثا ولا يملئ عينا ابن آدم إلا الترابযদি কারো একটি স্বর্ণের উপত্যাকা থাকে, তাহলে সে আরেকটি খুঁজতে থাকবে ৷ যদি দুটি থাকে তাহলে তৃত্বীয়টি খুঁজতে থাকবে ৷ মূলত মাটি ছাড়া আর কিছুই মানুষকে তৃপ্ত করতে পারে না ৷
এটা মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা ৷ সে কিছুতেই তুষ্ট হয় না ৷ তৃপ্ত হয় না ৷ আরো পেতে চায় ৷ আরো খেতে চায় ৷ কোথায় কে বেশী পাচ্ছে, বেশী খাচ্ছে সেদিকে তাকায় ৷ অথচ মানুষের প্রয়োজনীয় ও দরকারী রিযিকের দায়ীত্ব আল্লাহ তায়ালা নিজেই নিয়েছেন ৷ বরং সমস্ত প্রাণীদের রিযিকের দায়িত্ব নিয়েছেন মহান প্রভু ৷ وما من دابة في الأرض إلا علي الله رزقها পৃথিবীর সব বিচরণশীল প্রাণীর রিযিকের দায়ীত্ব আল্লাহ তায়ালা নিয়েছেন ৷ (হূদ/৬)
সুতরাং রিযিক বণ্টনকারী ও বিতরণকারী স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা ! আর আল্লাহ হলেন ন্যায় পরায়ণ প্রভু ৷ তিনি যথাযথভাবেই বণ্টন করেন ৷ রিযিক নানান রকম ৷ আটা,গম, চাউল, বাড়ী-ঘর,গাড়ী ব্যবসা ইত্যাদি ৷ যদি কাউকে কোনোটা কম দেন তাহলে তাকে আবার অন্যটা বাড়িয়ে দেন ৷ এভাবে মহান প্রভু রিযিক বণ্টনের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন ৷ ভারসাম্য রক্ষা করেন ৷
স্বজনের নয়নজুড়ে—
আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রতি দয়া করেছেন ৷ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন ৷ রিযিক ব্যবস্থাপনার প্রতিশ্রুতীও দিয়েছেন ৷ কুরআন কারীমে আল্লাহ তায়ালা অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন ৷ অনেক বিষয়ের স্থান, কাল, গন্তব্য ও উৎস বর্ণনা করেছেন ৷ রিযিক নিয়েও কথা বলেছেন ৷ কী বলেছেন ? وفي السماء رزقكم وما توعدون আকাশেই রয়েছে তোমাদের রিযিক ও প্রতিশ্রুতি সবকিছু ৷ আকাশেই আছে আমাদের রিযিক ৷ সূর্যের মতোই সত্য এই ঘোষণা ৷ বিষয়টিকে আরো গুরূত্বের সাথে প্রমাণ করছেন রব্বে কারীম পরের আয়াতে ৷ আল্লাহর কোন কথার কোন সাপর্ট বা তাকীদ দরকার নেই ৷ এমনিতেই ধ্রুব সত্য ৷ তথাপি মহান প্রভু কসম ও শপথের সাথে বলছেন, فورب السماوات والأرض إنه لحق مثل ما أنكم تنطقونআসমান ও জমীনের প্রভুর শপথ, নিশ্চয়ই তা তোমাদের মুখ নি:সৃত কথার মতোই সত্য ৷ (যারিয়াত /৭) প্রথমত আসমান ও জমীনের শপথ করেছেন, তারপর একটি মাহসূস তথা অনুভূত জিনিসের সাথে তুলনা করে বোঝাতে চেয়েছেন–তোমাদের মুখের কথা যেমন সত্য, বাস্তব, সুস্পষ্ট , তেমনি আকাশে তোমাদের রিযিক ও প্রতিশ্রুত সব বিষয়ও নির্ঝলা সংশয়হীন সত্য ৷ নিজের কথায় কী কারো কখনো সন্দেহ থাকতে পারে! এই আমি যে কথা বলছি, এব্যাপারে কী আমি কখনো সংশয় প্রকাশ করতে পারব? আমার কথা আমার মুখ থেকেই যে বের হচ্ছে, এব্যাপারে আমি সন্দিহান থাকতে পারব ? ঠিক তেমনই রিযিক যে আকাশ থেকে আসে,আকাশের ফায়সালায় আসে এব্যাপারেও বিন্দু পরিমাণ কোন সংশয় প্রকাশ করা যাবে না ৷
খুলে দাও, লুফে নাও–
কারো রিযিক যদি সঙ্কীর্ণ হয়ে যায়, কমে আসে; আর সে যদি চায় রিযিক কে বাড়াতে, বিস্তীর্ণ করতে ৷ তাহলে সে কী করবে? কী আমলে মনোযোগী হবে ৷ يتق الله তাহলে আল্লাহকে ভয় করে চলবে ৷ হৃদয়ে খোদাভীতি অর্জন করবে ৷ তাহলে আল্লাহ পথ খুলে দিবেন ৷ নিস্কৃতির পথ ৷ মুক্তির পথ ৷ বরকতের পথ ৷ يجعل له مخرجا এবং অপরিকল্পিত জায়গা হতে, অভাবণীয় স্থান হতে রিযিকের ব্যবস্থা করে দিবেন ৷ ويرزقه من حيث لا يحتسب (ত্বলাক/২) সঙ্কীর্ণতা দূর করে দিবেন ৷ অভাব মিটিয়ে দিবেন ৷ সব মানুষই কোন না কোন অভাবে থাকে ৷ কারো টাকার অভাব ৷ কারো খাবারের অভাব ৷ কারো সম্মানের অভাব ৷ কারও সুস্থতার অভাব ৷ তাকওয়ার গুণে যে গুণান্বীত হবে–আল্লাহ তায়ালা তাকে অভাব থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করে দিবেন ৷
এই আমি জীবনের এই গোধূলী বেলায় এসে উপণিত হয়েছি ৷ বৃদ্ধত্ব নিয়ে সময় পার করছি ৷ আলহামদুলিল্লাহ! টাকা ও খাবারের অভাব নেই ৷ আবাসন ও স্বজনের অভাব নেই ৷ সম্মান ও প্রাপ্তির অভাব নেই ৷ কিন্তু ফেলে আসা তারুণ্য নেই ৷ চলে যাওয়া উদ্দীপ্ত সময় নেই ৷ সুস্থতার নিশ্চিদ্র নেয়ামত নেই ৷ সমৃদ্ধ জীবনের পরেও কিছুটা অভাব ৷ এই অভাবের বোঝাও হালকা হয়ে যায় তাকওয়ার আলোয় জীবন আলেকিত হলে ৷ ومن يتق الله يجعل له مخرجاতাই জীবনের সব অংশেই তাকওয়া যখন জীবনের সঙ্গী হয়, স্বাচ্ছন্দ তখন জীবনকে ছায়া দেয় ৷ ভাগ্যকে সৌভাগ্যের আলো দেয় ৷ চিন্তাকে স্বস্থির সৌরভ দেয় ৷