মানুষের প্রয়োজন আনন্দ ও খুশীর উপলক্ষ। আরো প্রয়োজন বিনোদনের আয়োজন ও ক্ষেত্র! এ ছাড়া যে মানুষের জীবন চলে না! চলতে পারে না! এটি একটি সত্য, একটি বাস্তবতা!যে কোন বাস্তবতাকেই ইসলাম মূল্যায়ন করেছে! মানবতার কল্যাণ ও মানুষের আবেগ-অনুভূতি রক্ষা করেই ইসলামের বিধান এসেছে!
ইসলামের প্রতিটি বিধানে মানুষের যৌক্তিক আবেগ-অনুভূতি, স্বভাব ও রুচির যথার্থ মূল্যায়ন করা হয়েছে! জীবনের চাকা সচল রাখার জন্য যৌক্তিক বিনোদন ও রোমান্টিকতার আয়োজনও করেছে। পাশাপাশি এগুলোকে ইবাদত এবং সাওয়াব অর্জনের মাধ্যম হিসেবেও ঘোষণা দিয়েছে। এধরনের কাজ ইসলামে অনেক, যেগুলো মানুষ তার আনন্দ ও বিনোদনের জন্য, রোমান্টিকতা হিসেবে করে, শুদ্ধ নিয়তের সাথে হলে এসবও ইসলামে ইবাদত!!
স্ত্রীর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা। শুনতেই কেমন লাগছে! এও কী সম্ভব! এটি তো কেবল গল্পের বইতে পড়া যায় অথবা রূপকথার গল্পে শুনা যায়! অথচ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শে এটি আছে! এ রোমাণ্টিকতা ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে!
আম্মাজান আয়শা রা. বলেন, একবার আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ভ্রমণে ছিলাম।তখন আমর বয়স কম! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে বললেন, তোমরা আগে চলে যাও। তারা আগে চলে গেল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আসো দৌড় প্রতিযোগিতা করি!! আমি প্রতিযোগিতায় সম্মত হলাম এবং আমি আগে গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম, জয়ী হয়ে গেলাম! পরবর্তীতে একসময় আমি তাঁর সাথে ভ্রমণে ছিলাম! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে বললেন, তোমরা আগে চলে যাও। তার আগে চলে গেল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আসো দৌড় প্রতিযোগিতা করি!পূর্বের প্রতিযোগিতার বিষয়টি আমার স্মরণ ছিল না! আর স্বাস্থাধিক্যের কারণে আমার শরীরও তখন ভারি হয়ে গিয়েছিল। বললাম এই শরীর নিয়ে কীভাবে প্রতিযোগিতা করব! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোর দিয়ে বললেন অবশ্যই করবে! তখন প্রতিযোগিতা শুরু করি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগে চলে গেলেন, বিজয়ী হলেন এবং বললেন, আজকের বিজয় তোমার আগের বিজয়ের মোকাবেলায়! [সুনানে আবু দাউদ : ২৫৭৮]
কী চমৎকার আদর্শ! কী পবিত্র ভালোবাসা! কী অতুলনীয় বিনোদন ও রোমান্টিকতা! আমাদের জন্য ইসলামের এ বিধান প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ আদর্শ। একাধারে এটি রাসূলের আদর্শ, সাওয়াবের কাজ, বিনোদন ও রোমাণ্টিকত! তাই রোমান্টিকতা হোক পবিত্র! পারিবারিক জীবন হোক সুখের!
খাবার পানীয় ইত্যাদী মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয়। পানাহার ছাড়া মানুষ বাঁচে না! বিভিন্ন গল্পের বই ইত্যাদিতে পানাহার নিয়ে প্রিয়জনদের সাথে রোমাণ্টিকতার গল্প হয়ত পড়েছেন! কী ভাল লাগার গল্প! কী চমৎকার! পড়তেই রোমাঞ্চ অনুভব হয়! রোমাণ্টিকতার এ আদর্শ সয়ং প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ। রোমাণ্টিকতা মানে নোংরামি নয়, পবিত্র ক্ষেত্রে ভালবাসার আচরণই রোমন্টিকতা!
আম্মাজান আয়শা রা.কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, নারী পিরিয়ড অবস্থায় স্বামীর সাথে পানাহার করতে পারবে কি না? তিনি বললেন, হ্যাঁ, পারবে। আমার পিরিয়ড চলাকালীন রাসূলু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আহারের জন্য ডেকে পাঠাতেন, আমি তাঁর সাথে আহার করতাম। তিনি হাড্ডিসহ গোস্তের টুকরো নিতেন, আমাকে সেখান থেকে খাওয়ার জন্য শপথ করে বলতেন। আমি টুকরোটি নিয়ে কামড়িয়ে খেতাম। তারপর রেখে দিতাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোস্তের টুকরোটি নিতেন। আমি যেখানে মুখ লাগিয়ে খেয়েছি সেখানেই মুখ লাগিয়ে খেতেন। এরপর পানীয় আনতে আহবান করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে পান করার আগে আমাকে সেখান থেকে পানকরার জন্য শপথ করে বলতেন। আমি গ্লাস নিয়ে পান করে রেখে দিতাম। তিনি পাত্রটি নিয়ে পান করতেন। গ্লাসের যেখানে মুখ লাগিয়ে আমি পান করেছি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানেই মুখ লাগিয়ে পান করতেন!! [সুনানে নাসাঈ : ২৭৯,সহীহ মুসলিম :৩০০]
অন্য হাদীসে আছে, আয়শা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আগে পান করতে দিতেন। আমি পান করতাম। পরে তিনি পান করতেন এবং আমি যেখানে মুখ লাগিয়ে পান করেছি সেখানে মুখ লাগানোর চেষ্টা করতেন!!
এই ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রোমান্টিকতা! পবিত্র বিনোদন! ইসলাম আমাদের জন্য বিনোদনের পবিত্র এই আয়োজন উপহার দিয়েছে! সুতরাং বিনোদন ও রোমান্টিকতা হোক পবিত্রতার ভিত্তিতে, নববী আদর্শের আদলে এবং ইসলামের আয়োজন অনুযায়ী! পবিত্রতা ছড়িয়ে পড়ুক জীবনে, সামাজে! পবিত্র বিনোদনে সুখী হোক জীবন, সমৃদ্ধ হোক পরকালীন জীবনের পাথেয়!
সুখী হোক আপনার পারিবারিক জীবন! সুখী হউন আপনি! সুখী হোক সকলে! সুখী হোক সামজ।