নকীব বিন মুজীব = ০১৷ ০৪৷ ২০১৯
কিছু বিষয় এমন আছে যে, অভিজ্ঞতা ব্যতীত কেউ বোঝে না, বোঝা সম্ভব নয়৷ এমনই একটা বিষয় হল; আমাদের জন্য আমাদের মায়েদের কষ্ট৷ সন্তানের জন্য মায়ের কষ্ট৷
গর্ভধারণের সময়গুলো থেকে শিশুর লালন-পালনে একজন মায়ের ভূমিকা অপরিসীম, অকল্পনীয়৷ এগুলোকে পরিমাপ করার জন্য অনুভব ও অনুভূতি ব্যতীত কোন যন্ত্র পৃথিবীতে নেই৷ থাকলে মানুষ বুঝতো যে, সন্তানের জন্য একজন মা কী পরিমাণ কষ্ট স্বীকার করেন৷
গর্ভধারণের সময়গুলোতে একজন মা চলাফেরায় কষ্ট করেন৷ খাবার-দাবারে কষ্ট করেন৷ ঘুমের কষ্ট করেন৷ ঠিকমত চলতে-ফিরতে পারেন না৷ খেতে পারেন না৷ কিছু খেলে বমি করে সব ফেলে দেন৷ মুখে রুচি থাকে না৷থাকলেও খেতে পারে না৷ হঠাৎ হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায়৷ এদিক সেদিক করতে করতে রাত শেষ হয়ে যায়৷ গর্ভকালীন পুরো সময় নানাবিদ সমস্যা চলতেই থাকে৷
এরপর যখন সন্তান প্রসবের সময় ঘনিয়ে আসে, তখনকার অসহনীয় যন্ত্রনা ভুক্তভোগী ব্যতীত না কাউকে বুঝানো যাবে, আর না কেউ বুঝতে পারবে৷ আমার জানা নেই পৃথিবীতে আর কোন কষ্ট এমন আছে কি না! এ সময়ে আল্লাহ তাআলার কুদরতের কারিশমা কিছুটা হলেও অনুভূত হয়৷
সন্তান গর্ভে ধারণ করা যত কষ্টই হোক না কেন৷ জন্মপরবর্তী সন্তানের প্রাথমিক লালন-পালন এরচে অনেক বেশী কষ্টের৷ অনেক বেশি ধৈর্যের৷ অনেক বেশি সহ্যের৷ একজন মা সন্তানের জন্য নিজের সবকিছু বিসর্জন দিয়ে দেন৷ তারপরও সন্তানের বিন্দুপরিমাণ কষ্ট হোক এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না৷ মেনে নেন না৷ মায়ের সম্মান ও মর্যাদা বুঝতে পারিনা শুধু আমরা অধম সন্তানরা৷ যদি বুঝতেই পারতাম, তাহলে জীবনে কখনো মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার তো দূরের কথা; কখনো ‘উফ’ শব্দটিও উচ্চারণ করতাম না৷
পবিত্র কুরআনুল কারীমের সুরা ইসরার ২৩ নং আয়াতে মা-বাবার জন্য ‘উফ’ শব্দটি ব্যবহার করতে নিষেধ করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন অর্থ- “وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ۚ إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا” তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো, পিতা-মাতার কোনও একজন কিংবা উভয়ে যদি তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ্’ পর্যন্ত বলো না এবং তাঁদেরকে ধমক দিয়ো না; বরং তাঁদের সাথে সম্মানজনক কথা বল৷
এখানে ‘উফ্’ না বলার অর্থ হল: তাঁদের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ না করা, বিরক্তিসূচক কোন কথা তাঁদের সাথে না বলা৷ তাঁরা যদি কোন কথা বারবার বলে কিংবা শিশুদের মতো কোন অপ্রয়োজনীয় কথা বলে, তখনও বিরক্ত না হওয়া, বিরক্তির সাথে জবাব না দেয়া৷ কেননা আমি আর আপনি যখন ছোট ছিলাম, শিশু ছিলাম আমরা মা-বাবাকেএরচে অনেক বেশি বিরক্তি করেছি৷ তাঁদেরকে অনেক জ্বালাতন করেছি, অনেক কষ্ট দিয়েছি৷ কিন্তু সে দিন তাঁরা তো আমাদেরকে ফেলে দেননি, ছেড়ে যাননি৷ বিরক্তি প্রকাশ করেননি৷
আমাদের জন্মের পর আমাদের মা আমাদের জন্য কী পরিমাণ কষ্ট-ক্লেশ ও যাতনা সহ্য করেছেন! এটা কোনভাবেই বলে বুঝানো যাবে না৷ সম্ভব নয়৷ কত রাত জনম দুখিনী মা আমার শিয়রে বসে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন৷ একটু পর পরই ঘুমে হেলে পড়ে যায় যায় অবস্থা, কিন্তু আমি এখনো ঘুমাইনি বলে মা আমার জাগ্রত থেকেছেন৷ তারপর দিনে একটু ঘুমাবেন বলে নিয়ত করেও বাড়ির কাজের জন্য এতটুকুন সময় ঘুমাতে তিনি পারেন নি৷ সকাল হওয়া মাত্রই মা আমার হাড়ি-পাতিল নিয়ে পুকুরে৷ তারপর রান্না-বান্না, ঘর-দরজা পরিস্কার, বিছানাপত্র পরিপাটিসহ আমার পেশাব-পায়খানা করা কাঁথা-কাপড়-চোপড় তো আছেই৷ আবার হঠাৎ আমার কান্নায় দৌঁড়ে আসেন৷ কিছু সময় থাকতে না থাকতেই আরেক কাজ হাজির৷ এভাবেই বিরামহীন তাঁর ডিউটি চলতেই থাকে৷
কিন্তু আমি বড় নাফরমান সন্তান যে, কমপক্ষে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পরও প্রাণখুলে তাঁর জন্য বলতে পারি না, বলি না – ‘রব্বির হামহুমা কামা রব্বায়ানী সগীরা’৷ অথচ তাঁর পায়ের নিচেই তো আমার বেহেশত৷ কিন্তু আমি কী করছি৷ কিভাবে জীবন কাটাচ্ছি!! এ বিষয়ে একটু ভাবার সময় কি হবে!!? হে রব্বে কারীম! মা যে কী; এটা না আগে বুঝেছি না এখন বুঝি৷ মাওলা! তোমার কাছে কিচ্ছু চাই না!! শুধু এতটুকুন মিনতি: ‘রব্বির হামহুমা কামা রব্বায়ানী সগীরা’ দুআটি তুমি কবুল করো! তাঁকে রাখো তোমার ছায়ায়!