নকীব বিন মুজীব = শুক্রবার ১৪৷ ০৩৷ ২০১৯ = সকাল ৭: ৩৫।
বাড়ির কাজে স্ত্রীর সাথে শরীক হওয়া ৷ বাড়ির কাজেস্ত্রীকে সামান্য সহযোগিতা করাতার মন জয়ে বিরাট ভূমিকা রাখে ৷ তো কোন কাজে সুযোগ হয়েছে, হাত লাগান ৷ আপনার স্ত্রী তরকারী কাটছে ৷ আপনি পাশে বসুন ৷ টুকটাক কিছু করুন ৷ পেঁয়াজের খোসা ছাড়ান৷ শাকটা পরিস্কার করে দিন ৷ লাউ-কুমড়া কেটে দিন।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীদের সাথে কেমন আচরণ করতেন? তিনি কি কখনো বাড়ির কাজে অংশগ্রহণ করতেন? হ্যাঁ! এ ক্ষেত্রেও তিনি উত্তম আদর্শ, কোনও সন্দেহ নেই৷ একবার আয়েশা সিদ্দিকা রা.কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিবার-পরিজনের সাথে কেমন ছিলেন!?
তিনি বললেন: كان يكون في مهنة أهله، فإذا حضرت الصلاة خرج إلى الصلاة
অর্থ: “তিনি পরিবারের কাজকর্ম করতেন ৷ যখন নামাযের সময় হত, তখন নামাযে চলে যেতেন ৷” বুখারী ১/ ১৩৬ বোঝা গেল, নবীজি নিজেই স্ত্রীদের কাজে অংশগ্রহণ করতেন ৷
আমাদের সমাজে আমরা এ কাজটা করি না ৷ সংকোচ করি ৷ লজ্জাবোধ করি ৷ ভাবি; মানুষ কী বলবে ৷ কিন্তু একটু চিন্তা করে দেখি; দু-জাহানের শ্রেষ্ঠ মানব যিনি, তিনি যদি নিজ পরিবারের কাজে সহযোগিতা করতে পারেন, তাহলে আমি আর আপনি কেন পারব না! আপনি যখন নিজ স্ত্রীকে কাজে সহযোগিতা করবেন, দেখবেন সে আপনার প্রতি খুশী থাকবে ৷ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে সে-ই সর্বোত্তম, যে তার স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারের কাছে সর্বোত্তম ৷ আমি আমার স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারের কাছে সর্বোত্তম”।
ঘরের কাজকর্ম করার দ্বারা কখনো স্বামীর মান-মর্যাদা কমে না ৷ পৃথিবীশ্রেষ্ঠ মানব যখন স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করেন, তখন আমাদের কাছে অস্পষ্ট থাকে না যে, এ বিষয়ে একজন আদর্শ স্বামীর করণীয় কী? এভাবে ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক কিছু কাজ করার মাধ্যমেও স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরে পৌঁছে ৷ দরকার শুধু একটু আন্তরিকতা ও সহানুভূতির ৷ বিশ্বাস না হলে করেই দেখুন ৷ আমি নিশ্চিত আপনাদের ভালবাসা আরো বৃদ্ধি পাবে, আরো দৃঢ় ও গভীর হবে, কোনও কমতি বা খামতি তাতে থাকবে না।
একইভাবে, সময় সুযোগ থাকলে, আপনি নিজেই (মাঝে মাঝে হলেও) বাচ্চার কাপড়-চোপড়গুলো পরিস্কার করে দিন ৷ একদিন স্ত্রীর জামাগুলোও ধুয়ে দিন ৷ দেখবেন আপনার প্রতি তার মায়ময় দুর্বলতা আরো বাড়বে৷ কোনদিনও আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে না; বরং সুযোগ হলেই আপনাকে নিয়ে গর্ব করবে ৷ কখনো বাসায় আছেন ৷ ঘোষণা দিন,আজ রান্নাবান্না আমিই করব ৷ তুমি শুধু টুকটাক মসলাপাতি এগিয়ে দেবে ৷ দেখবেন,তার হাসিমুখটা আরো উজ্জ্বল ও লাবণ্যময় হয়ে উঠবে, আনন্দ ও ভালবাসায় তার মনটা ভরে যাবে। তার শুধু মনে হবে এ এক বড় পাওয়া!
আপনার সংসারটাকে সহজ করুন ৷ সবকিছু সুচিন্তিতভাবে পরিকল্পনা করে করুন ৷ কখনো প্রতিযোগিতার কথা বলুন যে, আজ তোমার কিছু কাজ আমি করি, আমার কিছু কাজ তুমি কর; দেখি, কে কত সুন্দরভাবে করতে পারে ৷ পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এভাবেই গড়ে উঠতে পারে একটি সুখী দাম্পত্যজীবন ৷ চলুন না, একটু প্র্যাকটিস করে দেখি।