আমীর হামযাহ
মানুষ এক অনন্য সৃষ্টি। চিন্তা, আবেগ, অনুভূতি—সব মিলিয়েই তার জীবন। একাকীত্ব কিংবা নিরানন্দ জীবন কখনো মানুষের জন্য প্রাকৃতিক নয়। জীবনের পরতে পরতে আনন্দ, বিনোদন ও ভালোবাসার রঙ ছড়িয়ে আছে। এই রঙগুলো ছাড়া মানুষের মন শুষ্ক, হৃদয় নিস্তব্ধ।
ইসলাম মানুষের এই স্বাভাবিক চাহিদাকে অস্বীকার করেনি, বরং তাকে একটি সুষ্ঠু ও শালীন কাঠামোর মধ্যে বিনোদন ও রোমান্টিকতার অনুমোদন দিয়েছে। ইসলাম শুধুমাত্র দুনিয়াবি সুখের কথা বলেনি, বরং শুদ্ধ নিয়তের মাধ্যমে এই বিনোদন ও ভালোবাসাকে ইবাদতের পর্যায়ে উন্নীত করেছে।
১. জীবনের সঙ্গীর মুখে খাবার তুলে দেওয়া: ভালোবাসা ও সওয়াবের সমন্বয়
রোমান্টিকতা আর ভালোবাসার সবচেয়ে মধুর একটি দৃশ্য—জীবনসঙ্গীর মুখে নিজের হাতে খাবার তুলে দেওয়া। এই সাধারণ অথচ গভীর মুহূর্তে লুকিয়ে আছে ভালোবাসার নিবিড় বহিঃপ্রকাশ। ইসলাম এটিকে শুধুমাত্র ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবেই সীমাবদ্ধ রাখেনি; বরং এটিকে সওয়াবের একটি সুযোগ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যা কিছু ব্যয় করবে, এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীকে যে লোকমা মুখে তুলে দেবে তাতেও তোমার জন্য সওয়াব রয়েছে।” (সহীহ বুখারি: ৫৬, ১৬২৮)
ভাবুন, এই সামান্য একটি কাজ, যেখানে ভালোবাসা ও স্নেহের প্রকাশ ঘটে, তা কিভাবে ইবাদতে পরিণত হয়!
২. ফুলের আদান-প্রদান: ভালোবাসার মিষ্টি উপহার
ফুল—যা যুগ যুগ ধরে ভালোবাসা ও রোমান্টিকতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ইসলাম এই রীতিকে সম্মান করেছে এবং এতে সৌন্দর্য্য খুঁজে পেয়েছে। কেউ যখন তার প্রিয়জনকে ফুল উপহার দেয়, তখন সেটি শুধু একটি উপহার নয়; এটি একটি মনের আবেগের প্রকাশ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“কাউকে সুগন্ধিযুক্ত ফুল দেওয়া হলে সে যেন তা ফিরিয়ে না দেয়।” (সহীহ মুসলিম: ২২৫৩)
একটি ছোট্ট ফুল, যার মাধ্যমে তৈরি হয় মিষ্টি মুহূর্ত, তা আবার রাসূলের সুন্নাহও বটে। এমনকি এটি একটি ইবাদতের অংশে পরিণত হয় যদি তা ভালোবাসা ও সদিচ্ছার মাধ্যমে করা হয়।
৩. সঙ্গীকে বাহনে উঠতে সহায়তা করা: রোমান্টিকতার উজ্জ্বল উদাহরণ
আজকের যুগে সিনেমা বা গল্পে আমরা দেখি, একজন স্বামী তার স্ত্রীকে গাড়িতে উঠতে সাহায্য করছেন। কেউ কেউ ভাবেন এটি পশ্চিমা সংস্কৃতির সৌন্দর্য। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই রোমান্টিকতার সূচনা হয়েছিল বহু আগেই, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন থেকে।
খায়বার যুদ্ধের সময় আম্মাজান সুফাইয়্যা রা. উটে উঠতে পারছিলেন না। নবীজী নিজে বসে গিয়ে তাঁর উরু মোবারকের উপর পা রাখার সুযোগ করে দেন, যাতে সুফাইয়্যা রা. সহজে উটে উঠতে পারেন। (সহীহ বুখারি)
এই মুহূর্তটি শুধুমাত্র ভালোবাসার প্রকাশ নয়, এটি বিনোদন এবং সৌহার্দ্যের নিদর্শনও বটে।
৪. ভালোবাসা ও বিনোদন: ইসলামের পরিপূর্ণতা
ইসলাম মানুষকে আনন্দ-বিনোদন থেকে বঞ্চিত করেনি; বরং তাকে একটি পরিশুদ্ধ রূপ দিয়েছে। পারিবারিক জীবনে বিনোদন মানে নয় কোনো অশ্লীলতা বা সীমালঙ্ঘন। এটি মানে ভালোবাসা, আন্তরিকতা, পরস্পরের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং সবচেয়ে বড় কথা—আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।
পারিবারিক জীবনে ইসলামী বিনোদনের কিছু উপায়:
জীবনসঙ্গীর প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা ও সহানুভূতি প্রকাশ করা।
পারস্পরিক উপহার বিনিময়।
একসঙ্গে সময় কাটানো, গল্প করা।
ছোট ছোট আনন্দের মুহূর্ত তৈরি করা।
শেষ কথা:
ইসলামী রোমান্টিকতা কেবল নিছক আবেগের বহিঃপ্রকাশ নয়, এটি একটি ইবাদতও বটে। এটি দাম্পত্য জীবনের বন্ধনকে সুদৃঢ় করে, হৃদয়ে প্রশান্তি আনে এবং পারিবারিক জীবনকে করে তোলে পরিপূর্ণ।
আসুন, আমরা ইসলামের এই চমৎকার দিকগুলোকে গ্রহণ করি। আমাদের পারিবারিক জীবনকে ভালোবাসা, বিনোদন ও সওয়াবের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করি।
সুখী হোক আপনার পারিবারিক জীবন। সুখী হোন আপনি। সুখী হোক আমাদের সমাজ।