আমীর হামযাহ
মানুষ বুঝ-বুদ্ধি, আবেগ-অনুভূতিবিশিষ্ট এক প্রাণী। একাকী জীবনযাপন করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এমনিভাবে সর্বদা মলিনমুখ থাকাও সম্ভব নয়। এভাবে কেউ জীবন পার করতে পারে না। মানুষের সৃষ্টিতেই এ স্বভাব ও প্রকৃতি আল্লাহ দান করেছেন। তাই মানুষের প্রয়োজন আনন্দ ও খুশীর উপলক্ষ। আরো প্রয়োজন বিনোদনের আয়োজন ও ক্ষেত্র! এ ছাড়া যে মানুষের জীবন চলে না! বিশেষত একটি বয়স পার করার পর মানুষ যখন উপনীত বয়সে পদার্পণ করে তখন অনেক ক্ষেত্রে এ ছাড়া জীবন সচল রাখা দায়! এটি একটি সত্য, একটি বাস্তবতা!
তাই ইসলাম মানুষের জীবন-বিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে এ বিষয়টির যথাযথ মূল্যায়ন করেছে। যাতে ধর্মটি মানুষের স্বভাব ও রুচির সাথে পূর্ণ মিলে যায়! ইসলামের প্রতিটি বিধানে মানুষের যৌক্তিক আবেগ-অনুভূতি, স্বভাব ও রুচির যথার্থ মূল্যায়ন করা হয়েছে! জীবনের চাকা সচল রাখার জন্য যৌক্তিক বিনোদন ও রোমান্টিকতার অনুমোদনও দিয়েছে। পাশাপাশি এগুলোকে ইবাদত এবং সাওয়াব অর্জনের মাধ্যম হিসেবেও ঘোষণা দিয়েছে। এধরনের কাজ ইসলামে অনেক, যেগুলো মানুষ তার আনন্দ ও বিনোদনের জন্য, রোমান্টিকতা হিসেবে করে, শুদ্ধ নিয়তের সাথে হলে এসবও ইসলামে ইবাদত!!
চলুন তাহলে জেনে নেই ইসলামী বিনোদন ও রোমান্টিকতা! পাশাপাশি অনেক সাওয়াব অর্জন করে আখেরাতকে সমৃদ্ধ করি!
এক. অনেক সময় দেখা যায় কেউ তার প্রিয়জনের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। কোন গল্পে বা অভিনয়ে! এতে অনেকেই পুলকিত হন! শিহরণ অনুভব করেন! আনন্দের ঢেউ বয়ে যায় শরীরে! তন্ময়তায় ভাবতে থাকেন, কত রোমান্টিকতা! কত আনন্দ!! হ্যাঁ! এটি বাস্তবই আনন্দের! তাই, ইসলাম এর অবকাশ দিয়েছে! এ রোমান্টিকতা ইসলামে আছে। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,“তুমি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার নিয়েতে যা ব্যায় করবে, এমনিকি যে লোকমা তোমার জীবনসঙ্গীর মুখে তুলে দিবে তাতে তুমি (সদকার) সাওয়াব লাভ করবে!” [সহীহ বুখারী : ৫৬, ১৬২৮] বাহ! কী চমৎকার! জীবনসঙ্গীর (স্বামী-স্ত্রী) মুখে খাবার তুলে দিয়ে আপনি রোমাঞ্চিত হচ্ছেন, সঙ্গীর ভালবাসার পাশপাশি লাভ করছেন সদকার সাওয়াব!
আরো পড়ুন : স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া মিটিয়ে ফেলার টিপস
দুই. অনেক সময় একে অপরকে ফুল দেয়। কোন উপলক্ষে ফুল বিনিময় করে! দেখতে, ভাবতে ভাল লাগে! কী সুন্দর! কী চমৎকার! মধুর অনুভূতি! আনন্দের ঘোর যেন কাটতেই চায় না! বাস্তবেও এটি রোমাঞ্চের! এটি আনন্দের! সে জন্যই ইসলাম এ বিষয়ে বিধান দিয়েছে! কেউ ফুল দিলে ফিরিয়ে দিতে নিষেধ করেছে! প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কাউকে রায়হান (ঘ্রাণ যুক্ত যেকোন ফুল) দেওয়া হলে সে যেন ফিরিয়ে না দেয়!” [সহীহ মুসলিম : ২২৫৩] সাহাবী হযরত আনাস রা. বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো তীব তথা সুগন্ধি জাতীয় কিছু ফিরিয়ে দিতন না!” [সহীহ বুখারী : ৫৫৮৫] বেশ চমৎকার! এক দিকে প্রিয়জনের (যাদের সাথে বৈধ) সাথে ফুল বিনিময়ে আনন্দ ও রোমঞ্চতা, আর অপর দিকে রাসূলের সুন্নাত! বিনোদন ও সাওয়াব দুটোই একত্রে!
তিন.অনেক সময় দেখা যায়, একজন তার জীবনসঙ্গীকে বাহনে উঠতে সহায়তা করছে। তার জন্য গাড়ি দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে। তার হাত ধরে উপরে উঠতে সহায়তা করছে! পশ্চিমা কোন দেশের এধরনের দৃশ্য দেখে অনেকেই রোমাঞ্চিত হন! ভাবেন, তাদের আদর্শ কী রোমাঞ্চকর! তারা কত বিনোদন প্রিয়! কিন্তু অনেকেই জানি না, ইসলাম তো আরো বেশি বিনোদন প্রিয়! প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসল্লামের আদর্শ আরো রোমাঞ্চকর!! খায়বর যুদ্ধে আম্মাজান সুফাইয়্যাহ রা. উটে উঠতে পারছিলেন না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বসে গেলেন! তাঁর পবিত্র উরু মোবারকে পা রেখে আম্মাজান সুফাইয়্যাহ রা. বাহনে উঠলেন!! রোমাঞ্চকর! সত্যিই! ইসলাম আমাকে আপনাকে এই বিনোদন ও রোমাঞ্চতা শিখায়! বিনোদন ও সাওয়াব দুটোই একত্রে! ইসলামকে জানুন। ইসলাম শিখুন! স্ত্রীকে ভালবাসুন! স্ত্রীর সাথে রোমান্টিক হউন! সুখী হউন! জীবন সুন্দর করুন!
সুখী হোক আপনার পারিবারিক জীবন! সুখী হউন আপনি! সুখী হোক সকলে! সুখী হোক সামজ।