মাওলানা ইমদাদুল্লাহ বিন আশরাফ আলী।।
আমাদের মা-বোনেরা বিয়ে, ঈদ, অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন উপলক্ষে হাতে পায়ে মেহেদি ব্যবহার করে থাকেন। ছোটবেলায় গ্রামে দেখেছি, ঈদের রাতে আশপাশের বাড়িঘরের মহিলারা একত্রিত হয়ে শিলপাটায় মেহেদি পাতা পিষে দলবদ্ধভাবে মহানন্দে হাতে পায়ে মেহেদি মাখায়। বিয়ে ও ঈদ উপলক্ষে মহিলারা এভাবেই বিপুল আনন্দ ও উৎসাহের সাথে মেহেদি লাগায়।
মূলত নারীদের জন্য মেহেদি ব্যবহারে কোনোরূপ বিধিনিষেধ নেই। ইসলাম বরং নারীদের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য মেহেদি ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান করেছে। এজন্য নারী সাহাবীগণের মেহেদি ব্যবহারের বর্ণনা হাদীসে প্রচুর পাওয়া যায়। তাই নারীদের জন্য মেহেদি ব্যবহার করা মুস্তাহাব ও উত্তম।
এক হাদীসে এসেছে, উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
ﺃﻭﻣﺖ اﻣﺮﺃﺓ ﻣﻦ ﻭﺭاء ﺳﺘﺮ ﺑﻴﺪﻫﺎ ﻛﺘﺎﺏ ﺇﻟﻰ ﺭﺳﻮﻝ اﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ، ﻓﻘﺒﺾ اﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺪﻩ، ﻓﻘﺎﻝ: «ﻣﺎ ﺃﺩﺭﻱ ﺃﻳﺪ ﺭﺟﻞ، ﺃﻡ ﻳﺪ اﻣﺮﺃﺓ؟» ﻗﺎﻟﺖ: ﺑﻞ اﻣﺮﺃﺓ، ﻗﺎﻝ: «ﻟﻮ ﻛﻨﺖ اﻣﺮﺃﺓ ﻟﻐﻴﺮﺕ ﺃﻇﻔﺎﺭﻙ» ﻳﻌﻨﻲ ﺑﺎﻟﺤﻨﺎء.
‘এক নারী হাতে একটি কিতাব নিয়ে পর্দার আড়াল থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে ইশারা করলো। নবীজী তাঁর নিজের হাত গুটিয়ে নিয়ে বললেন, আমি জানি না এটা পুরুষের হাত না নারীর হাত? সে বলল, বরং নারীর হাত। তিনি বললেন, তুমি নারী হলে অবশ্যই তোমার নখ পরিবর্তন করতে- অর্থাৎ মেহেদী দিয়ে।’
[সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪১৬৬]
অপর হাদীসে এসেছে, হযরত আয়েশা রাযি. বলেন-
ﺃﻥ ﻫﻨﺪ ﺑﻨﺖ ﻋﺘﺒﺔ، ﻗﺎﻟﺖ: ﻳﺎ ﻧﺒﻲ اﻟﻠﻪ، ﺑﺎﻳﻌﻨﻲ، ﻗﺎﻝ: «ﻻ ﺃﺑﺎﻳﻌﻚ ﺣﺘﻰ ﺗﻐﻴﺮﻱ ﻛﻔﻴﻚ، ﻛﺄﻧﻬﻤﺎ ﻛﻔﺎ ﺳﺒﻊ».
‘হিন্দ বিনতে উতবাহ (রাযি.) বললেন, হে আল্লাহর নবী! আমাকে আপনি বাই‘আত করে নিন। নবীজী বললেন, তুমি তোমার দুই হাতের তালুর রঙ পরিবর্তন না করা পর্যন্ত আমি তোমাকে বাই‘আত করবো না। সে দুটো যেন হিংস্র প্রাণীর থাবার ন্যায়।’
[প্রাগুক্ত, হাদীস : ৪১৬৬]
এসব হাদীসের ভিত্তিতে ইমাম নববী রহ. বলেছেন,
ﺃﻣﺎ ﺧﻀﺎﺏ اﻟﻴﺪﻳﻦ ﻭاﻟﺮﺟﻠﻴﻦ ﺑﺎﻟﺤﻨﺎء ﻓﻤﺴﺘﺤﺐ ﻟﻠﻤﺘﺰﻭﺟﺔ ﻣﻦ اﻟﻨﺴﺎء: ﻟﻷﺣﺎﺩﻳﺚ اﻟﻤﺸﻬﻮﺭﺓ ﻓﻴﻪ ﻭﻫﻮ ﺣﺮاﻡ ﻋﻠﻰ اﻟﺮﺟﺎﻝ ﺇﻻ ﻟﺤﺎﺟﺔ اﻟﺘﺪاﻭﻱ ﻭﻧﺤﻮﻩ
‘উভয় হাত ও পা মেহেদি দ্বারা রঞ্জিত করা বিবাহিত নারীর জন্য মুস্তাহাব। কারণ, এ মর্মে অনেক প্রসিদ্ধ হাদীস রয়েছে। তবে পুরুষদের জন্য চিকিৎসা ও চুলদাড়িতে ব্যবহার ছাড়া তা ব্যবহার করা হারাম।’
[আল-মাজমূ ১/২৯৪]
বর্তমানে গ্রামগঞ্জেও এখন আর মেহেদি পাতা পিষে ব্যবহার করার দৃশ্য খুব একটা দেখা যায় না। বাজারে আজকাল এক প্রকার কৃত্রিম মেহেদি কিনতে পাওয়া যায়, যা টিউব মেহেদি নামে পরিচিত। তাতে এমন এক প্রকার মেডিসিন দেওয়া হয়, যার দ্বারা মাত্র পাঁচ মিনিটেই ত্বকের উপর পুরোপুরি রঙ ধরে যায়। উক্ত মেহেদি স্বল্পমূল্য ও সহজলভ্য এবং ব্যবহারে সুবিধাজনক হওয়ায় বর্তমানে প্রায় সকলেই তা ব্যবহার করে থাকে। তবে এজাতীয় মেহেদি ব্যবহারের এক-দুদিন পর ত্বকের উপর থেকে পাতলা আবরণের মতো উঠে আসে।
এ কারণে অনেকে প্রশ্ন করেন যে, এ ধরনের টিউব মেহেদি ব্যবহার করা জায়েয হবে কি না? এবং তা ব্যবহার করলে অযু-গোসল সহীহ হবে কি না? নিম্নে এর শরয়ী বিধান উল্লেখ করা হলো :
‘টিউব মেহেদি’ ব্যবহার করা জায়েয। শরীয়তের দৃষ্টিতে এতে কোনো সমস্যা নেই। আর তা ব্যবহার করে প্রলেপ উঠিয়ে ফেলার পর অযু-গোসল সবই সহীহ হবে। কেননা এ মেহেদি লাগানোর পর শরীরে যে রঙ অবশিষ্ট থাকে যার কোনো কোনোটিতে পরবর্তীতে আবরণের মতো উঠে তা আমাদের জানামতে চামড়ায় পানি পৌঁছার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক নয়। তাই এজাতীয় মেহেদি ব্যবহার করতে অসুবিধা নেই।
[শরহুল মুনয়া ৪৮; রদ্দুল মুহতার ১/১৫৪]