একজন ছাত্র ভাইয়ের হৃদয়ের কিছু কথা তার বন্ধুদের প্রতি। যেন আমাদের বিরতি শুধু “বিরতি” না হয়। বন্ধুরা! আশা করি উপকৃত হবে। তাই মনোযোগ দিয়ে পড়বে।
১। মাতা-পিতার খেদমাত :
সর্বপ্রথম কাজ হল মাতা-পিতার খেদমত করার চেষ্টা করা। খেদমত মানে সরাসরি তাদের কোন কাজ করে তাদেরকে খুশি করে দেয়া। যেমন : তাদের জামা-কাপড় ধোয়া, মাথায় তেল দেয়া, জুতা জোড়া পরিষ্কার করা, বাজার করা, ঘরের কাজে সাহায্য করা ইত্যাদি। মাতা-পিতার নিকট সন্তান সর্বদা সন্তানই। তাই আমাদের উচিত নিজেদের সমস্ত পদ-মর্যাদা নিজ কর্মস্থলে রেখে মাতা-পিতার নিকট যাওয়া। একটা বিষয় সবসময় আমাকে খুউব পীড়া দেয়। আমরা লেখা-পড়ার জামানায় অধিকাংশ সময় মাদরাসাই থাকি। বছরে ৩/৪ টি বিরতি পাই। বাসা-বাড়িতে গেলেই পিতা-মাতা তাদের আদরের সন্তানকে খুশি করার জন্য ব্যস্ত হয়ে যান। আমাদের পক্ষে তাঁদের খেদমত করা সম্ভব হয় না। শিক্ষকতা/কর্মজীবনেও একই অবস্থা। কোরআন হাদীস থেকে পিতা-মাতার খেদমতের গুরত্ব সর্বোচ্চভাবে জানার পরও আমরা তার বাস্তবায়ন করতে পারি বলে আমার মনে হয় না। (যদিও সাধারণ মানুষের তুলনায় এক্ষেত্রে আলিম সমাজ বহুদূর এগিয়ে তারপরও।)
২। আত্মীয়-স্বজনদের হক আদায় করার ব্যপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। এক্ষেত্রেও আমাদের অবহেলা সুস্পষ্ট এবং যথেষ্ট বদনামও রয়েছে!
৩। নিজ পরিবার ও আত্মীয়রা দীনদার না হলে, হিকমাত ও দরদের সহিত তাদের পিছনে মেহনত করতে থাকা। এটি তাদের হক্ব ও আমাদের কর্তব্য।
৪। সমাজসেবা ও সমাজ আয়ত্ব করা।
সাধারণ জনগণের সাথে আলিম সমাজের দূরত্বের পরিণাম যে কি, তা ভাবলে শরীর শিউরে উঠে। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, সমাজের সাধারণ ধারার বাইরে থেকে কোন অবস্থায়ই সমাজ পরিবর্তন সম্ভব নয়। যে কোন জাতির সংস্কার করতে হলে “নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে” সকল গণমুখী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে হবে। অনেকটা দ্বীপের বাসিন্দার মতো একঘরে হয়ে জাতির হেদায়েত আশা করা দিবাস্বপ্ন ছাড়া কিছুই না। সকল নবী-রাসূলদের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সমাজের সকল সাধারণ কর্মকাণ্ডে তাদের ভূমিকা ছিল সবার আগে। বর্তমানে আলিম সমাজ (আমরা) গণমুখি কার্যক্রম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অসংখ্য সামাজিক সমস্যা সমাধানের দায়ভার যেন -গণবিচ্ছিন্ন জনবল ও জনসমর্থনহীন- মুষ্টিমেয় নাস্তিকদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে। তাই বিরতির এই সময়গুলো যদি হিকমাহ ও ইখলাসের সহিত সমাজিক কার্যক্রমে দেয়া হয়, ইনশাআল্লাহ সহজেই এসমস্যার সমাধান হবে। অবশ্যই তা পরামর্শক্রমে হতে হবে। এক্ষেত্রে এলাকার প্রবিণ ও মুরুব্বি আলিম এবং নিজ উস্তাদদের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা অপরিহার্য। সমাজিক কার্যক্রমের ধরণ ও ধারা অনেক। বিস্তারিত আলোচনার দাবি রাখে।
৫। এলাকার ক্বওমী ঘরাণার লোকদের মাঝো পরস্পর যোগাযোগ ও গভীর বন্ধন গড়ে তোলা। এলাকার ক্বওমী মাদরাসার ছাত্রদের সার্বিক উন্নতির জন্য পরামর্শ ও মুযাকারাসভার আয়োজন করা। প্রয়োজনে মুরুব্বিদের পরামর্শ নিয়ে “ক্বওমীসংঘ” গঠন করা যেতে পারে।
৬। এলাকার সন্তানদেরকে দ্বীন শিখার জন্য তাশকিল করা। প্রত্যেকেই প্রতি বছর নিজ এলাকা থেকে কমপক্ষে ১জন ছাত্র মাদরাসায় আনার চেষ্টা করা। এর জন্য প্রতি বন্ধেই কাজ করতে হবে। আমরা নিজেরাও তো কারো মাধ্যমেই মাদরাসায় এসেছি। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এটি একটি আন্দোলন। এতে আমাদের বিজয়ী হতেই হবে!
৭। এলাকায় কোন ক্বওমী মাদরাসা থাকলে তার সার্বিক উন্নয়নের জন্য সর্বাত্বক চেষ্টা করা। আর যদি কোন মাদরাসা না থাকে তাহলে বর্তমানে সবাহী মক্তব ও ভবিষ্যতে একটি মাদরাসা (নূরানী হলেও) করার জন্য এখন থেকেই চেষ্টা ও ফিকির করতে থাকা।
৮। তালিবে ইলম বা আলেমদের কোন দিবস ইলম তালাশ থেকে শূন্য থাকতে পারে না। তাই বিরতির এই সময়গুলোতে রোজ কিছু কিছু হলেও মোতালআ ও অধ্যয়ন করা। এক্ষেত্রে কারো জীবনী, চরিত্র ও জীবন গঠনমূলক কোন বই বা কোন রিসালাও হতে পারে।
৯। আখলাক ও চরিত্রের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করার চেষ্টা করা। উপরোল্লিখিত কাজসমূহ করতে আখলাকের কোন বিকল্প নেই। নিজ চরিত্রের মাধ্যমে সকলকে মুগ্ধকরে তাদেরকে দ্বীনের পথে আনা সহজ। অন্যথায় সম্ভব নয়।
১০। চোখের পানি, দোয়া ও তাহাজ্জুদের মাধ্যমে আল্লাহর দরবার থেকে সব মঞ্জুর করিয়ে নেয়া। পাশাপাশি মাদ্রাসার নিয়মিত মা’মুলাতও ঠিক রাখা।
আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। যারা “আমীন” বলবে তাদেরও।