إِنَّكَ أَنْ تَدَعَ وَرَثَتَكَ أَغْنِيَاءَ خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَدَعَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُونَ النَّاسَ فِي أَيْدِيهِمْ
“তোমার সন্তান-সন্ততিদেরকে দরিদ্র, অভাবী ও ভিক্ষুক অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে, স্বচ্ছল ও সম্পদশালী রেখে যাওয়া শ্রেয়।” [বুখারী হাদীস নং ২৫৯১, ২৭৪২।]
আলোচিত আয়াত ও হাদীস হতে স্পষ্টভাবে একথা প্রমাণ হয় যে, আপন স্ত্রী-সন্তান, পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের হক্ব ও দায়িত্ব আদায় করা অপরিহার্য। অধিনস্তদের খাদ্য-বস্ত্র ও আবাসন ব্যবস্থা ধর্মীয়ভাবে ব্যক্তির উপর বর্তায়। আর এ সমস্ত দায়িত্ব আদায়ে উপার্জন আবশ্যকীয়। তাছাড়া উত্তরাধিকারীদের স্বাবলম্বী ও সচ্ছল রেখে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কারণ আর্থিক অস্বচ্ছলতার কোন পর্যায়ে সম্পদের প্রয়োজন মিটাতে অপরের দারস্থ হতে হয়। অথচ পরনির্ভরতায় ইসলাম মানুষকে নিরুৎসাহিত করেছে।
ইসলাম পরনির্ভরতা পছন্দ করে না
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরনির্ভরতায় নিরুৎসাহিত করে বলেন,
لأَنْ يَحْتَطِبَ أحَدُكُمْ حُزْمَةً عَلَى ظَهْرِهِ ، خَيْرٌ لَهُ مِنْ أنْ يَسْألَ أحداً فَيُعْطِيَهُ أَوْ يَمْنَعَهُ
“মানুষের কাছে চেয়ে বেড়ানোর চাইতে আপন পিঠে কাষ্ঠ বহন করে উপার্জন করা অনেক উত্তম ও শ্রেয়, চাই তাকে দান করুক বা না করুক।” [বুখারী, হাদীস নং ২০৭৪, ২২৪৫, ১৯৬৮; মুসলিম, হাদীস নং ১০৪২।]
অপর হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরনির্ভরতায় নিরুৎসাহিত করে বলেন,
لأَنْ يَأخُذَ أحَدُكُمْ أحبُلَهُ ثُمَّ يَأتِيَ الجَبَلَ ، فَيَأْتِيَ بحُزمَةٍ مِنْ حَطَب عَلَى ظَهْرِهِ فَيَبِيعَهَا ، فَيكُفّ اللهُ بِهَا وَجْهَهُ ، خَيْرٌ لَهُ مِنْ أنْ يَسْألَ النَّاسَ ، أعْطَوْهُ أَوْ مَنَعُوهُ
“রশি নিয়ে পাহাড়ে গিয়ে, স্ব পৃষ্ঠে কাঠের বোঝা বহন করে এবং তা বিক্রি করে উপার্জন করে সাবলম্বী হওয়া, মানুষের কাছে চেয়ে বেড়ানো হতে অনেক উত্তম, চাই তকে মানুষেরা দান করুক বা না করুক।” [বুখারী হাদীস নং ১৪৭১, ১৪০২, ২২৪৪।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরনির্ভরতাকে লাঞ্ছনার কারণ উল্লেখ করে বলেন,
لَا تَزَالُ الْمَسْأَلَةُ بِأَحَدِكُمْ حَتَّى يَلْقَى اللهَ، وَلَيْسَ فِي وَجْهِهِ مُزْعَةُ لَحْمٍ
“তোমাদের যে কেউ সর্বদা মানুষের নিকট চেয়ে বেড়ায়, কিয়ামত দিবসে সে এমতাবস্থায় উঠবে যে, তার চেহারায়া গোস্তের কোন অস্তিত্বই থাকবে না।” [বুখারী হাদীস নং ১৪৭৬; মুসলিম, হাদীস নং ২৪৪৩।]
হাদীসদু’টির ভাষ্য হতে প্রমাণিত হয় যে, পরনির্ভরতা ইসলাম সমর্থন করে না; বরং তা অপছন্দ করে এবং এ কাজে নিরুৎসাহিত করে। পাশাপাশি এটিকে লাঞ্ছনার কারণ বলা হয়েছে। দরিদ্রতা অনেক সময় মান-মর্যাদ এমনকি ঈমান নষ্টের কারণ হয়। তাই দরিদ্রতাকে হাদীসে কুফুরির সম্ভাব্য কারণ বলা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
كَادَ الْفَقْرُ أَنْ يَكُونَ كُفْرًا
“দরিদ্রতা যেন কুফুরির কারণ।” [শুআবুল ঈমান, হাদীস নং ৬৬১২, ৫/২৬৭।]
তাই নানাবিধ চাহিদা মেটাতে, জীবনের নানা পর্যায়ের দায়িত্ব আদায় করতে, আপন ইজ্জত-আব্রু ও ঈমান হেফাজত করতে, সম্পদের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে ইসলাম মানুষকে বৈধ উপার্জনে উৎসাহিত করেছে। হাদীসের ভাষায় তো উপার্জনকে ফরয (আবশ্যকীয়) বলা হয়েছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
طَلَبُ كَسْبِ الْحَلاَلِ فَرِيضَةٌ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ
“যাবতীয় ফরজের পর হালাল উপার্জন তালাশ করাও ফরজ।” [সুনানে বায়হাক্বী হাদীস নং ১২০৩০।]