আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করে তার মাঝে নানাবিধ চাহিদা দিয়েছেন এবং সে চাহিদা মিটানোর পদ্ধতিও বলে দিয়েছেন। মানুষকে তিনি খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার চাহিদা দিয়েছেন। পাশাপাশি জৈবিক চাহিদাও দিয়েছেন। এসব চাহিদা পূরণের জন্য সুনির্দিষ্ট বিধি-নিষেধ দিয়েছেন। এমনি ভাবে জৈবিক চাহিদা পুরণের জন্য বিবাহের বিধান দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা বাবা আদম আ. কে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর বংশ বিস্তারের জন্য হাওয়া আ. কে সৃষ্টি করে আদম আ. এর সাথে বিবাহের ব্যবস্থা করেন। সে ধারায় মানবতার ধর্ম ইসলাম, নারী পুরুষের মধ্যে সুন্দর ও পুতঃপবিত্র জীবনযাপনের জন্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ব্যবস্থা নির্ধারণ করেছে। অবাধ, বল্গাহীন, স্বেচ্ছাচারী জীবনের উচ্ছৃঙ্খলতা ও নোংরামির অভিশাপ থেকে সুরক্ষা করতেই ইসলাম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জোর তাগিদ প্রদান করেছে।
নারী পুরুষের পবিত্রতা ও সতিত্ব রক্ষার বাস্তব সম্মত হাতিয়ার হল বিবাহ-ব্যবস্থা। এটি একটি শুভ অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় ইবাদত, যা পালনের মধ্য দিয়ে নারী পুরুষের ভবিষ্যৎ জীবনের সূচনা হয়। এর মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর উপর গুরু দায়িত্ব অর্পিত হয়। দায়িত্ব কর্তব্য এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পরস্পরকে সুবিবেচনার অধিকারী হয়ে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে দাম্পত্য জীবনকে সুন্দর, সুখকর ও পবিত্র করে রাখা হয়।
ইসলামে বৈরাগ্য নীতির কোন স্থান নেই। ইসলামে সামর্থ্যবান ব্যক্তিকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বিবাহ না করা ইসলমে নিষিদ্ধ। একটি ভর্ৎসনামূলক কাজ। কোরআন পাকে বিয়ে এবং স্ত্রী গ্রহণের ব্যবস্থাকে নবী রাসূলের প্রতি আল্লাহ তাআলার এক বিশেষ দান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلاً مِّن قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجاً وَذُرِّيَّةً
“হে নবী আপনার পূর্বেও আমি অনেক নবী-রাসূল পাঠিয়েছি এবং তাঁদের জন্য স্ত্রী ও সন্তানের ব্যবস্থা করেছি।” [সূরা রাদ : ৩৮]
পোশাক মানব দেহকে সকল প্রকার নগ্নতা, অশ্লীলতা, কুশ্রীতা ইত্যাদি থেকে বাঁচিয়ে রাখে। ঠিক তেমনিভাবে বিবাহর মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে বাঁচিয়ে রাখে। বিবাহের মাধ্যমেই সতীত্ব ও চারিত্রিক পবিত্রতা অটুট থাকে। আল্লাহ বলেন : هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ
“স্ত্রীরা হচ্ছে তোমাদের জন্য পোষাক স্বরূপ, আর তোমরা তাদের জন্য পোষাক স্বরূপ।” [সূরা বাক্বারাহ : ১৮৭]
পবিত্র কোরআনে বিবাহের প্রতি উৎসাহিত করে ইরশাদ হয়েছে :
فَانْكِحُوهُنَّ بِإِذْنِ أَهْلِهِنَّ وَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ مُحْصَنَاتٍ غَيْرَ مُسَافِحَاتٍ وَلَا مُتَّخِذَاتِ أَخْدَانٍ
“তোমরা তাদের অভিভাবকদের অনুমতিক্রমে তাদের বিয়ে কর; যথাযথভাবে তাদের মোহর প্রদান কর; যেন তারা বিয়ের দূর্গে সুরক্ষিত হয়ে থাকতে পারে এবং অবাধে যৌনচর্চা ও গোপন বন্ধুত্বে লিপ্ত না হয়ে পড়ে। [সূরা নিসা : ২৫]
এ আয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহপাক বিয়ে করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন। পাশাপাশি বিয়ে না করে অবাধ যৌনসম্পর্ক স্থাপন করার প্রতি নিরুৎসাহিত করেছেন।
বিবাহের আদেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : فَانْكِحُوا مَا طَابَ لَكُمْ مِنَ النِّسَاءِ
“সুতরাং তোমাদের যে নারী ভালো লাগে তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হও।” [সূরা নিসা : ৩।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামর্থ্যবান লোকদেরকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রতি বিশেষভাবে অনুপ্রাণীত করার সাথে সাথে সামর্থ্য থাকা সত্তেও ইচ্ছাকৃতভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হওয়াকে নিরুৎসাহিত করেন। সমাজের সামর্থ্যবান যুবক যুবতীদেরকে উদ্দেশ্য করে পবিত্র হাদিসে এরশাদ করেন যা প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ
“হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে, তাদের বিবাহ করা কর্তব্য। কেননা বিবাহ দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণকারী, যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষাকারী। আর যার সামর্থ্য নেই সে যেন সিয়াম পালন করে। কেননা সিয়াম হচ্ছে যৌবনকে দমন করার মাধ্যম।” [সহীহ বুখারী : ৫০৬৬; সহীহ মুসলিম : ১৪০০]
বিবাহ না করে চিরকুমার ও নিঃসঙ্গ জীবনযাপনের অনুমতি ইসলামে নেই। সাআদ ইবনু আবী ওয়াক্কাছ রা. বলেন, رَدَّ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى عُثْمَانَ بْنِ مَظْعُوْنٍ التَّبَتُّلَ، وَلَوْ أَذِنَ لَهُ لاَخْتَصَيْنَا
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওছমান ইবনু মাযঊনকে নিঃসঙ্গ জীবনযাপনের অনুমতি দেননি। তাকে অনুমতি দিলে আমরা নির্বীর্য হয়ে যেতাম।” [ সহীহ বুখারী ; ৫০৭৩]
“আয়েশা (রাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিঃসঙ্গ জীবনযাপনকে নিষেধ করেছেন।” [সহীহ বুখারী : ৫০৭৩।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীদের নিকট আগত তিন ব্যক্তির এক ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করার স্বার্থে বিবাহ না করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ، فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِىْ فَلَيْسَ مِنِّىْ
“আমি নারীদেরকে বিবাহ করি (সুতরাং বিবাহ করা আমার সুন্নাত)। অতএব যে আমার সুন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার দলভুক্ত নয়।” [সহীহ বুখারী : ৫০৬৩।]