খালেদ আহমদ
পরিবার ইসলামের দৃষ্টিতে মানবজীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। এটি এমন একটি আশ্রয়স্থল, যেখানে ভালোবাসা, সম্মান ও পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আল্লাহর বিধান অনুসারে জীবন পরিচালিত হয়। আদর্শ পরিবার কেবল একটি সামাজিক কাঠামো নয়, বরং এটি একটি পবিত্র অঙ্গন, যেখানে শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক প্রশান্তি লাভ করা সম্ভব।
১. আল্লাহর প্রতি আনুগত্য:
আদর্শ পরিবারের প্রথম শর্ত হলো আল্লাহর প্রতি আনুগত্য এবং তাঁর বিধান মেনে চলা। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের উচিত নামাজ আদায়, কুরআন তেলাওয়াত এবং ইসলামী নৈতিকতার চর্চা করা। আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
“হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবারকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর।” (সূরা তাহরীম: ৬)
২. বৈধ বিবাহ:
পরিবারের ভিত্তি হলো বৈধ বিবাহ। ইসলাম বিবাহকে কেবল শারীরিক সম্পর্কের সীমায় আবদ্ধ করেনি, বরং এটিকে পারস্পরিক দায়িত্ববোধ, ভালোবাসা এবং বোঝাপড়ার মাধ্যমে একটি পবিত্র বন্ধন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
“তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে স্ত্রীগণকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া স্থাপন করেছেন।” (সূরা রূম: ২১)
৩. স্বামী ও স্ত্রীর ভূমিকা:
স্বামী এবং স্ত্রী, উভয়ের ভূমিকা একটি আদর্শ পরিবারের মূল স্তম্ভ।
স্বামীর দায়িত্ব: পরিবারের অর্থনৈতিক ও মানসিক চাহিদা পূরণ এবং সঠিক পথে পরিচালিত করা।
স্ত্রীর দায়িত্ব: সন্তানের লালন-পালন এবং পরিবারের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তার পরিবারের কাছে উত্তম আচরণ করে।” (তিরমিজি)
৪. সন্তানদের সঠিক লালন-পালন:
সন্তানদের নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান পিতামাতার প্রধান দায়িত্ব। ছোটবেলা থেকেই তাদের ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“তোমাদের প্রত্যেকেই রক্ষক এবং তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে।” (সহিহ বুখারি)
৫. পিতা-মাতার অধিকার:
পিতা-মাতা পরিবারে সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী। তাদের প্রতি বিনয়, দয়া এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে আচরণ করা সন্তানের অন্যতম কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা বলেন:
“তোমার প্রতিপালক আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।” (সূরা বনি ইসরাইল: ২৩)
৬. পারিবারিক সমস্যা সমাধানে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি:
পারিবারিক জীবনে সমস্যা এলে ধৈর্য, পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
“নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের জন্য রয়েছে বিশাল প্রতিদান।” (সূরা যুমার: ১০)
৭. পারিবারিক জীবনে ইবাদত ও দোয়ার গুরুত্ব:
পরিবারের সদস্যদের একত্রে ইবাদত করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দোয়া করা উচিত। আল্লাহ তাআলা বলেন:
“হে আমাদের প্রভু! আমাদের জন্য আমাদের স্ত্রী এবং সন্তানদের মধ্যে শান্তি ও আনন্দ দান করো এবং আমাদের মুত্তাকিদের নেতা বানাও।” (সূরা ফুরকান: ৭৪)
উপসংহার:
আদর্শ পরিবার গড়ে তোলার মূল চাবিকাঠি হলো আল্লাহর বিধান মেনে চলা এবং রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করা। ভালোবাসা, দয়া, সম্মান ও পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা একটি পরিবার শুধু ব্যক্তিগত জীবনের শান্তি নিশ্চিত করে না, বরং সমগ্র সমাজ ও জাতির উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইসলামি মূল্যবোধে গড়ে ওঠা একটি পরিবার দুনিয়াতে শান্তি ও আখিরাতে সফলতা বয়ে আনে।